খুনের মীমাংসার টাকা না দেওয়ায় সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত
নেত্রকোনার মদনে খুনের ঘটনার মীমাংসায় টাকা না দেওয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের আলমশ্রী গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ৮ জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গুরুতর আহতরা হলেন লতিফ মিয়া ছেলে শহীদ (৪০), কাসেম আলীর ছেলে সালেহীন (২৫), হাসু মিয়ার ছেলে অলি ( ৩০), কাছম আলী স্ত্রী আছিয়া আক্তার ( ৬০), মারফত আলীর ছেলে কাসেম (৩২), মইজুদ্দিনের ছেলে তারু (৬০), আব্দুলের ছেলে সম্রাট (৩০)। এছাড়া অন্যরা মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানা গেছে, গত প্রায় দেড় মাস আগে আলমশ্রী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে খুনের ঘটনাটি আপোষ মীমাংসার সালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে আসামী পক্ষকে দশ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায় ,গত সাত বছর আগে আমলশ্রী গ্রামের ফারুখ, বিল্লাল ও কামরুলসহ পাঁচ গোত্র জিলদার মিয়ার পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে জিলদার মিয়ার ছেলে বিবেক নিহত হন। এ ঘটনায় ওই সময় নিহতের পরিবার প্রতিপক্ষের ৭৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। এ ঘটনাটি আপোষ মীমাংসা করতে স্থানীয় লোকজন উদ্যোগ নেন। পরে গত দেড় মাস আগে একটি সালিশী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় নিহতের পরিবারকে আসামীর পক্ষ দশ লক্ষ টাকা জরিমানার দিবেন। পাঁচ গোত্রের মধ্যে একটি গোত্রের প্রধান ইউপি সদস্য ফারুক মিয়া সবাইকে নিয়ে টাকা বাদী পক্ষকে টাকা দিয়ে পরিশোধ করতে চান।
কিন্তু অপর গোত্রের প্রধান বিল্লাল মিয়া টাকা পরিশোধ করতে অস্বীকার করেন। তিনি আলাদাভাবে টাকা পরিশোধসহ বিষয়টি আপোষ মীমাংসার কথা বলেন। এ নিয়ে শুক্রবার বিকেলে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে হয়। এ সময় বিল্লাল মিয়ার পক্ষের লোকজনের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাটি ঘটে।
ইউপি সদস্য ফারুক মিয়া বলেন, ‘বিবেক হত্যার প্রধান আসামি হলাম আমি। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য এবং উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের নেতৃস্থানীয় লোকজন দেড় মাস আগে মীমাংসা করেন। আমাদের ৫ গুষ্টির আসামিপক্ষের লোকজনকে দশ লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। এ টাকা নিহতের পরিবারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। টাকা পরিশোধ করার জন্য বারবার আমরা চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। বিল্লাল, কামরুলসহ তারা টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তবে আজকের যে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছে আমি বাড়িতে ছিলাম না। শুনেছি মারামারি হয়েছে।’
বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘আমরা জরিমানা টাকা একজনের কাছে জমা রেখেছিলাম নিহতের পরিবারের কাছে টাকাটা দিতে। আপোষ মীমাংসার জরিমানার টাকা হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফারুকের কাছে না দেওয়ায় আমাদের লোকজনের ওপর এ হামলা করেছে। এতে আমাদের পক্ষের ২৫টি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে ফারুক মেম্বারসহ তার লোকজন মিলে।’
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক আপোষ মীমাংসার সালিশি বৈঠকের একজন মাতুব্বর বলেন, ‘আসামি পক্ষ ও বাদী পক্ষকে নিয়ে সালিশী বৈঠকে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিবেক খুনের ঘটনাটি মীমাংসা হয়। এ দশ লক্ষ টাকা নিহতের পরিবারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুল আলম শাহ্ বলেন, ‘আলমশ্রী গ্রামের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগের পেলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’