নান্দাইলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, অফিসকক্ষে তালা
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত বুধবার দুপুরে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন অভিভাবক, কমিটির সদস্য ও স্থানীয়রা। তালা ঝোলানোর বিষয়টি অধ্যক্ষ নিজেই সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. সামছুল হক ফকির। মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন মোট ৩৪ জন। তার বিপরীতে শিক্ষার্থী প্রায় ৩০০। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে মাদরাসা তার জৌলুস হারাচ্ছে।
সম্প্রতি চতুর্থবারের মতো কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এসব পদে এর আগে পরপর তিনবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অনেক প্রার্থীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিয়োগ সম্পন্ন করেননি অধ্যক্ষ। এ অবস্থায় এবার চতুর্থবারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ খবর প্রচার হলে পূর্বে আবেদন করা প্রার্থীরা অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে আবেদন বাতিল করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে পূর্বে আবেদন করা মনিরুজ্জামান নামের এক প্রার্থী মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি) লুৎফুন নাহার বরাবর চাকরি দেওয়ার নামে অধ্যক্ষ ৯ লাখ টাকা নিয়েছেন মর্মে অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই ফের দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিবাদে বুধবার সকালে মাদরাসায় গিয়ে বিক্ষোভ করেন। ওই সময় অভিভাবক ও স্থানীয়রা যোগ হয়ে মাদরাসা চলাকালীন সময়ে সব শিক্ষককে বের করে পাঠদান বন্ধ করে অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে কমিটির সদস্য হারুন অর রশিদ জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বারবার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও সব সময় পার পেয়ে যান তিনি। এবার তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটির কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার দিন তারিখ নির্ধারণ করেছেন। এতে স্পষ্ট, এই নিয়োগে বড় ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। তাই প্রতিবাদে তালা লাগানো হয়েছে।
মাদরাসার উপাধ্যক্ষ আব্দুল মতিন জানান, পাঠদান চলাকালীন সময়ে কমিটির সদস্য ও স্থানীয়রা মিলে দুপুর ১২টার দিকে সবাইকে বের করে দিয়ে অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। কেন তালা ঝোলানো হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়োগ নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে ঝামেলার কারণে।’
ঢাকায় অবস্থান করা অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মো. সামছুল হক ফকির মোবাইল ফোনে বলেন, ‘কমিটির সদস্যরা নিয়োগ পদের ভাগ চেয়েছিলেন। স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষা হবে বলায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে অফিসকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। এ ঘটনায় খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ময়মনসিংহ জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লুৎফুন নাহার জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তবে তালা ঝোলানোার বিষয়টা তার জানা নেই বললেন তিনি।
