নেপালের অন্তর্বর্তী নেতা নির্বাচন /
বিক্ষোভকারী-সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচনা
নেপালের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের একজন নেতা নির্ধারণ করতে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘জেন-জি’ প্রজন্মের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আবার আলোচনা করেছে সেনাবাহিনী। বাহিনীটির একজন মুখপাত্র এ তথ্য জানান। নেপালে তরুণদের দুই দিনের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। বিক্ষোভ ঘিরে সর্বশেষ হিসাবে প্রায় ৩৪ জন নিহত হন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৬৮ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে প্রয়োজন অনুসারে কারিফিউ ও বিধিনিষেধমূলক আদেশের সময়সীমা সমন্বয় করা হয়েছে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিসে কিছু কিছু কার্যক্রম চলেছে। নেপালি ট্যুরিজম বোর্ড রাজধানী কাঠমান্ডুতে শাটল বাসের কার্যক্রম চালু করেছে। দেশে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেল জনগণ ও রাজনীতিকদের শান্ত থাকতে এবং শান্তি বাজায় রাখা ও সাংবিধানিক বিধিনিষেধ মেনে চলতে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দ্রুত সবকিছুর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হিমালয়ান টাইমস ও এএফপি।
বিক্ষোভ ও অলি সরকারের পতনের পর রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় সেনারা টহল দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এ বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যম ও বার্তা আদান-প্রদানের প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে।
পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়লে ১৯ জন নিহত হন। এরপর সরকার ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। অবশ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা
হলেও কেপি শর্মার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ চলতে থাকে।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
নেপালে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজা রাম বাসনেট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে এবং আজও (গতকাল) তা চলবে। বাসনেট নতুন অন্তর্বর্তী নেতা নিয়ে আলোচনার কথা বলছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।’
নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিক্ষোভে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ এ দাঁড়িয়েছে।
সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কাঠমান্ডু ও এর আশপাশের এলাকায় দিনের (গতকাল) বেশির ভাগ সময় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। তবে বিমানবন্দরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, নেপাল থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু আছে। এদিকে নেপালের পুলিশ তাদের লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ, ইউনিফরমসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এ বিক্ষোভকে ‘জেন-জি’ বিক্ষোভ বলা হচ্ছে। কারণ, এতে অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই তরুণ, যারা দুর্নীতি দমন ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার পরিবেশ তৈরিতে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করেছিলেন।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
বিক্ষোভকারীরা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছেন। এ কথা জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সচিব রমন কুমার কর্ন। তার সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করেছিলেন।
সুশীলা কারকি ভারতীয় টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল সিএনএন-নিউজ১৮-কে বলেন, ‘তারা আমাকে অনুরোধ করেছেন, আমি তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছি।’
বিক্ষোভের সময় সুপ্রিমকোর্ট থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের বাড়ি, এমনকি অলির ব্যক্তিগত বাসভবনসহ সরকারি ভবনগুলোতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরও ওই দিন বিক্ষোভ-সহিংসতা চলেছিল। পরে রাষ্ট্রপতি ও সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
বিক্ষোভকারীরা যেসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- পর্যটন শহর পোখারার বেশ কয়েকটি হোটেল ও কাঠমান্ডুর হিলটন হোটেল। অনেক কারাগার থেকে বন্দিরা পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস