গণতান্ত্রিক উত্তরণে বড় চ্যালেঞ্জ অনৈক্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
গণতান্ত্রিক উত্তরণে বড় চ্যালেঞ্জ অনৈক্য

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের পথে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য থাকলেও আশা ছাড়ছেন না রাজনীতিবিদরা। তারা মনে করেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে কিছু ভিন্নমত থাকলেও দেশ, গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ঐক্যে পৌঁছাতে হবে। গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে এখন থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনের আগে প্রশাসনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার একটা প্রচেষ্টা বড় দলগুলোর মধ্যে রয়েছে। এই মানসিকতা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় নেতারা এসব কথা বলেন। ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ : সফল নির্বাচন আয়োজনে সরকার, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এ মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নাগরিক কোয়ালিশন নামের একটি নাগরিক ফ্ল্যাটফর্ম।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, সাবেক বিচারপতি এমএ মতিন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, জামায়াতের সহকারী সাধারণ সম্পাদক এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সাবেক নির্বাচন কমিশনার জেসমিন টুলি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মাসুদ, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনুভা জাবিন, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, অর্থনীতিবিদ জিয়া হাসান, প্রকাশক মাহরুখ মহিউদ্দিন প্রমুখ। নাগরিক কোয়ালিশনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।

সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও নিজেদের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের বিষয়ে এখনও ঐকমত্য হয়তোবা পোষণ করতে পারিনি। সময় আছে, এর ভেতর আশা করি সবাই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সেই ঐকমত্যে পৌঁছতে পারব। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি সনদ বাস্তবায়ন করবে না- বিভিন্ন মহল থেকে এমন আলোচনা-সমালোচনা ওঠার বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি যে সরকার গঠন করবে, এটা কে বলল? কথাটা হওয়া উচিত- যারা ক্ষমতা আসবে তাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য। আর জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ব্যতিরেকে কোনো রাজনৈতিক দল ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে পারবে না।

সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন পরস্পর নির্ভরশীল নয়- উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যে সংস্কারগুলো আশু বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো নির্বাহী আদেশ ও অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করা যায় এবং করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করার বৈধ ফোরাম জাতীয় সংসদ। এর বাইরে কোনো বৈধ প্রক্রিয়া আছে কি না, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হচ্ছে। যদি থাকে তাহলে তারা একমত হবেন। কিন্তু এমন কোনো উদাহরণ সৃষ্টি হোক তারা চান না, যেটি পরবর্তী সময়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ হবে এবং প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সেপ্টেম্বর মাস থেকেই সরকারকে কাজ শুরু করতে হবে। তিনি সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ সমন্বয় কমিটি গঠনেরও পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, দেশের কোথাও কোনো দলের সঙ্গে অন্য দলের সংঘাত হলে, অগণতান্ত্রিক আচরণ হলে, সেই প্রশ্নগুলো এখন থেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং হওয়া দরকার। আসন্ন নির্বাচনে যে দল সরকার গঠন করবে, সেই দলের সঙ্গে প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হতে চাওয়ার মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিবেশ নিয়ে কাজ করলে হবে না।

জেসমিন টুলি বলেন, এবারের নির্বাচনে কেন্দ্র থাকবে ৪২ হাজারের বেশি। আর বুথের সংখ্যা ২ লাখ ৪৫ হাজার। এতগুলো কেন্দ্রে নির্বাচন কেমন হচ্ছে, তা তদারকি করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হতে পারে, ডাকসু নির্বাচন তার একটি বড় ‘টেস্ট’ ছিল। এই টেস্টে রাজনৈতিক দল, সুধী সমাজ ও শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে উতরে গেছেন। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত একটি ঘটনাও ডাকসু নির্বাচনে ঘটেনি। নির্বাচন নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সরকারের বৈঠক হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি ভালো নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সদিচ্ছা থাকতে হবে। আর জনগণ যদি বানের জলের তোড়ের মতো ভোট দিতে যায়, তাহলে কারও সাধ্য নেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার। তিনি বলেন, ইউটিউবে কেউ কেউ নিয়মিত মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন, যা রীতিমতো ভয়াবহ।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আপাতদৃষ্টিতে ডাকসু নির্বাচন ফেয়ার হলেও সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তি প্রদর্শন দেখা গেছে। এমনটা জাতীয় নির্বাচনেও যে হবে না- তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকা দরকার।