এস আলম গ্রুপের কর্ণধারসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এসআইবিএলের ২০৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
এস আলম গ্রুপের কর্ণধারসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) থেকে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ২০৭ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন ও আত্মসাতের অভিযোগে বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ এস আলমের কর্ণধার সাইফুল আলমসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করা হয়েছে বলে কমিশনের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন।

মামলায় সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার, তার ভাই ও গ্রুপের পরিচালক রিক হক সিকদারকেও আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের তিন বোন মমতাজুল হক সিকদার, লিসা ফাতেমা হক সিকদার, পারভীন হক সিকদার এবং রিক হক সিকদারের ছেলে জন হক সিকদারকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে এসআইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীসহ ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, জন হক সিকদার যিনি প্রোপ্রাইটর বেঙ্গল ও অ্যান্ড এম সার্ভিসেসের নামে ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর এসআইবিএলের কারওয়ান বাজার শাখায় হিসাব খোলা হয়। একই দিনে তিনি পাওয়ার প্ল্যান্টের দুটি কার্যাদেশ বাস্তবায়নের কথা বলে ১৫০ কোটি টাকার বাই-মুরাবাহা ঋণের আবেদন করেন। তবে দুদকের তদন্তে কোনো কার্যাদেশ বা জামানত পাওয়া যায়নি। আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ অনুমোদন করে এবং একই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি একই দিনে ১২টি ডিলের মাধ্যমে পুরো ১৫০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। একই দিন সিকদার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এম এস কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপারস, মাহবুব এন্টারপ্রাইজ ও ম্যাম ইমপেক্সের অনুকূলে যথাক্রমে ৪৭ কোটি, ৪৮ কোটি ও ৬০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো জামানত, কার্যাদেশ বা প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনুমোদনপ্রাপ্ত এই ঋণের পুরো অর্থ একই দিনে বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করা হয়। ঋণের ১৫০ কোটি টাকাসহ ২০২৫ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সুদসহ মোট ২০৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। যা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

গত বছর জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও গ্রুপের পরিচালক রিক হক সিকদার

এবং বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের নামে আলাদা একাধিক মামলা করেছে দুদক।

স্বাস্থ্য খাতের ঠিকাদার মিঠুর নামে মামলা অনুমোদন : স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারে জড়িত আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর বিরুদ্ধে ৭৫ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুদক। গতকাল এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইস ও টেকনোক্রেট নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিঠু কৃষিজমি ক্রয়, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে আরও ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ তার নামে পাওয়া গেছে। তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

এ ছাড়া মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ সম্পদ ও ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

দুদক বলছে, ব্যবসা, বাড়ি ভাড়া, কৃষি আয়, বেতন-ভাতা, ব্যাংক সুদ, নিরাপত্তা জামানতের সুদ এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্সসহ বৈধ উৎস থেকে তার আয় হয়েছে ৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে প্রায় ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে।

২০১৬ সালে প্রকাশিত বহুল আলোচিত পানামা পেপারসে নাম আসে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর। অভিযোগ রয়েছে, তার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজের নামে প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন।