ডাকসু নির্বাচনে গভীর ষড়যন্ত্রের ফল প্রতিফলিত হয়েছে: প্রিন্স

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৩৩
শেয়ার :
ডাকসু নির্বাচনে গভীর ষড়যন্ত্রের ফল প্রতিফলিত হয়েছে: প্রিন্স

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে গভীর ষড়যন্ত্রের ফল প্রতিফলিত হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র আমরা অনুমান করতে পারছিলাম, তবে নিয়ন্ত্রণ বা মোকাবিলা করতে পারি নাই।’

তিনি বলেন, ‘১৭ বছর রাষ্ট্রীয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ছাত্রলীগের নির্মম দমন-নির্যাতনে ছাত্রদল ক্যাম্পাসের বাইরে, কিন্তু শিবির ছাত্রলীগের শরীরে বিলীন হয়ে হাসিনা, তার বাবা ও নৌকার নামে স্লোগান দিতে দিতে অস্থির ছিলো। তারা আবার ৫ আগস্টের পর শিবির নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে।’

আজ বুধবার দুপুরে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ময়মনসিংহ উত্তর জেলা মহিলা দলের উদ্যোগে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এ সভা।

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে স্বৈরাচার ও রাজাকার একাকার হয়ে গেছে। গণশত্রু ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসতে ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না, বাংলাদেশের জনগণ তাদের সন্তানদের হত্যাকারীদের আর কখনোও গ্রহণ ও ক্ষমা করবে না। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সখ্যতা দীর্ঘ দিনের। তারা একে অপরের মাসতুতো ভাই। এরশাদের স্বৈরাচারকে বৈধতা দিতেও বাংলাদেশের স্বৈরাচারের জন্মদাতা আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত একসাথে নির্বাচন করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে জামায়াত বিপদের দিনে তাদের পাশে থেকে সুরক্ষা দেওয়া বিএনপির হাত ছেড়ে তাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যাকারী আওয়ামী লীগের রক্তমাখা হাত ধরতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না।’

ডাকসু নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে প্রায় ৮০ ভাগ ভোট কাস্ট হওয়া মনে, বিগত ১৬ বছরে দুর্দান্ত প্রতাপের সঙ্গে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ভোটেও কাস্ট হয়েছে। এই ভোট গেলো কার পকেটে—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের স্বতস্ফূর্ত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে বিগত ১৬ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের শরীরে গুপ্তভাবে বিলীন হয়ে থাকা শিবিরের বিজয়ের নেপথ্যের কারণ বেরিয়ে আসবে। ছাত্রলীগের গুপ্ত ভোট ও জামায়াত-কানা প্রশাসনের ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে শিবিরকে জেতানো হয়েছে। ষড়যন্ত্র ও ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে জামায়াত-শিবিরের বিজয় বিশ্বাসযোগ্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘তারা সরকারের প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় আধিপত্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ করছে। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তা এবং মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের সুতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নয়। অথচ, এবার ডাকসু নির্বাচন করা হয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে নির্বাচনের মতো। যে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ দূরে থাক, ডাকসু নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ফলাফল শিবিরের পক্ষে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। জামায়াত-শিবির প্রভাবিত ভিসিসহ প্রশাসনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা জেনেও নির্বাচনে যাওয়া ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সঠিক ছিলো কী না, সেটাও প্রশ্নের দাবি রাখে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতকানা প্রশাসন, ছাত্রলীগের গুপ্ত ভোট, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো রেখে নির্বাচন করা ছাত্র শিবিরকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। নিজেরও আত্মসমালোচনা করতে হবে ছাত্রদলকে। কেনো ষড়যন্ত্র ধরতে পারা গেলো না, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সেন্টিমেন্ট কী আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি?’

এ সময় তিনি সকলকে আত্মউপলব্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় কৌশল ও করণীয় নির্ধারণে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

আগামী নির্বাচনের আওয়ামী লীগের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, ‘দিল্লিতে বসে তাদের আমলে অবৈধ সুবিধাভোগী শিল্প গ্রুপের কাছ থেকে খুনি হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা নিচ্ছে আগামী নির্বাচন ঠেকাতে ও নিজেরা ফিরে আসতে। সেই টাকার উত্তাপ সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে। তারা জনগণ ও বহির্বিশ্বকে দেখাতে চাইছে, বাংলাদেশে তাদের অনুপস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণপন্থীদের উত্থান ও জয়জয়কার। এদের ঠেকাতে হাসিনার বিকল্প নাই।’

অনুষ্ঠানে মহিলা দলের নেতাকর্মীদের প্রতি ঘরে ঘরে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সালাম পৌঁছে দিয়ে ধানের শিষের প্রচারণা শুরু করার ও জামায়াতের মহিলা কর্মীদের বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি তানজীন চৌধুরী লিলির সভানেত্রিত্বে ও সাধারণ সম্পাদিকা হোসনে আরা নিলুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, গৌরিপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফেজ আজিজুল হক, জেলা মহিলা দলের সিনিয়র সহ সভানেত্রী রেহানা পারভীন ববি প্রমুখ বক্তব্য দেন।