পুলিশের ওপর হামলা মামলায় আরও গ্রেপ্তার ৩
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা নিয়ন্ত্রণের সময় পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফ আল রাজীব বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মো. লাল মিয়া মৃধার ছেলে ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিরু মৃধা, দক্ষিণ উজানচর দিরাজতুল্লা মৃধাপাড়া আক্কাস মৃধার ছেলে ও উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাসুদ মৃধা, দেওয়ানপাড়া গ্রামের আবজাল সরদারের ছেলে শাফিন সরদার, একই এলাকার জহির উদ্দিনের ছেলে এনামুল হক জনি ও কাজী পাড়ার আরিফ কাজীর ছেলে কাজী অপু, দিরাজতুল্লাহ মৃধা ডাঙ্গীর মকলেছুর রহমান মৃধার ছেলে মো. হায়াত আলী মৃধা, নতুনপাড়া (মাল্লাপট্রি) মো. শওকত সরদারের ছেলে মো. জীবন সরদার, গোয়ালন্দ পৌরসভার আদর্শ গ্রামের ছালামের ছেলে বিল্লু, মাল্লাপট্রি শাকের ফকিরপাড়ার হেলাল উদ্দিনের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, নতুন পাড়ার মো. শওকত সরদারের ছেলে মো. জীবন সরদার ও ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার ডিগ্রিরচর বারখাদা গ্রামের মো. নিজাম উদ্দিন সরদারের ছেলে মোহাম্মদ ফেরদৌস সরদার, ১নং বেপারী পাড়া গ্রামের আইয়ুব আলী গাজীর ছেলে আলমগীর গাজী, নজর উদ্দিন সরদারপাড়ার ইসাক সরদারের ছেলে সোহান সরদার ও দেওয়ানপাড়ার নেকবার আলী শেখের ছেলে রিয়াজ হোসেন রিতান্ত। এদের মধ্যে অপু ও বিল্লু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সাড়ে তিন হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এরপরই শনিবার থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত গোয়ালন্দঘাট থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) যৌথ অভিযান চালিয়ে এ মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ সমাবেশ করে তৌহিদি জনতা। বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলার দরবার শরীফে। পাল্টা আক্রমণ করেন নুরাল পাগলের ভক্তরা। সংঘর্ষে একজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে নুরাল পাগলের দরবার শরীফে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয় তৌহিদি জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। সেই মামলায় ১৪জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, ২৩ আগস্ট মারা যান নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা। এরপর তার ভক্তরা দরবারের ভেতরে তাকে কবর দেন এবং কবরের ওপরের ১০-১২ উঁচু একটি স্থাপনা নির্মাণ করা হয় যা সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মুসলমানদের কেবলা কাবা শরীফে মতো দেখতে। তাই এ নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছিলেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ।
এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরে শুক্রবার জুমার নামাজের পর তৌহিদি জনতার ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন মুসল্লিরা। পরে তারা দরবারে হামলা চালান এবং দরবারের ভেতরে থাকা নুরাল পাগলের কবর ভেঙে দেন। সেই সঙ্গে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে তা পুড়িয়েও দেন।