আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতদিন যেমন ছিল, সাম্প্রতিক কয়েক দিনের ঘটনায় কিছুটা খারাপের দিকে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। তিনি বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজায় অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। গত বছরের ন্যায় এ বছরও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল রবিবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে নির্বাচনী দায়িত্ব পেশাদারত্বের সঙ্গে সম্পাদনে পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. নাসিমুল গণি। স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম) আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কবর থেকে নুরাল পাগলার লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। পাঁচজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে। কারও অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না, সেটা তদন্তেই বের হবে। কেউ দোষী প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
আগামী নির্বাচনে এসব পরিস্থিতি জনগণের অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনটা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে না। এর কতগুলো স্টেকহোল্ডার রয়েছে। এর মধ্যে জনগণ, তারা কতটুকু অংশগ্রহণ করবে। সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দল, তারা নির্বাচনটা কীভাবে করছে; এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সবার সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং প্রধান উপদেষ্টার যে আশা- একটা উৎসবমুখর নির্বাচন সম্ভব নয়। আশা করব, আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে, এটা যেন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হয়।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনারা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন মাথা থেকে মুছে ফেলবেন। আরেকটি অনুরোধ, সমাজ থেকে দুর্নীতি ও মাদক কমাতে পারেন কি না। যদিও আমরা এখন ইলেকশন মডিউলে চলে গেছি। তারপরও নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে এই জিনিসটা খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের তেলবাজি না করে পুলিশকে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে চেষ্টা করার আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
মো. খোদা বখস চৌধুরী বলেন, জুলাই-আগস্টের পর পুলিশে কতটা পরিবর্তন এসেছে, তার প্রমাণ হবে আগামী নির্বাচন। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং যথাযথভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা নির্বাচন উৎসবমুখর অবস্থায় নিয়ে যেতে পারব।
মো. নাসিমুল গণি বলেন, একটা উৎসবমুখর নিরাপদ নির্বাচন উপহার দেওয়া, জনগণকে নিরাপদ রাখা এবং পুলিশের হারিয়ে যাওয়া সম্মান পুনরুদ্ধার করা পুলিশের দায়িত্ব। আমরা যেন একটা সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারি এবং জনগণ খুশি হয়- পুলিশকে সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আইজিপি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেবল ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া নয়, বরং জনগণের বিশ্বাসের প্রতিফলন। এই নির্বাচনে নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করা পুলিশের জন্য একটি ‘ঐতিহাসিক পরীক্ষা’। এটি শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, গণতন্ত্রের শেকড়কে আরও মহিমান্বিত করার এক সুযোগ। নির্বাচনের সময় প্রায় দেড় লাখ পুলিশ মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের প্রত্যেকের কার্যক্রম জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষিত হবে।