নির্বাচনী তফসিলের আগে শ্রম আইন সংশোধনের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ
নীলফামারীতে শ্রমিকের প্রাণহানির প্রতিবাদ এবং জুলাই সনদে গণতান্ত্রকি শ্রম আইনের নিশ্চয়তা ও নির্বাচনী তফসিলের আগে শ্রম আইন সংশাধনের দাবিতে সমাবশে ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহীম চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। সমাবেশে আরেও বক্তব্য দেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি নেতা কেন্দ্রীয়সহ সভা-প্রধান অঞ্জন দাসসহ, শ্রমিক নেতা আকলিমা আখতার, হযরত বিল্লাল, নুরুল ইসলম, আরশাদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, শাহীদা বেগম, হাবিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতারা।
সমাবেশে সংহতি বক্তব্য দেন নারী সংহতরি সাধারণ সম্পাদক অপরাজতিা দেব, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, বহুমুখী শ্রমজীবি হকার সমিতির সভাপতি নেতা বাচ্চু ভুইয়া, আউসোর্সিং কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা নুরুল হক, দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা সাইফুল ইসলাম অন্যান্য নেতারা। সমাবেশ শেষে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ডসহ একটি মিছিল পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশে বক্তারা নিন্দা জানিয়ে বলেন, নীলফামারী ইপিজেডের এভারগ্রিন প্রতিষ্ঠান বকেয়া বেতন ও ছাঁটাইবিরোধী আন্দোলনে আইন শৃংঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই পুলিশ সংস্কারের দাবি শ্রমিক সংগঠনসহ অন্যান্যরা জানালেও সেই সংস্কার হয়নি। আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপত্তার বদলে গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে শ্রমিক। তারা এই ঘটনা তীব্র নিন্তা ও প্রতিবাদ জানান। দ্রুত তদন্ত, বিচার ও যথাযথ ক্ষতিপুরণ দাবি করেন। এবং পুলিশের মানববিধ্বংসী মারণাস্ত্র ব্যববহারবিধি পরিবর্তন সংশোধন ও পুলিশ সংস্কারের দাবি জানান।
তারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আকাঙ্খা নিয়ে শ্রম আইন পরিবর্তন ও শ্রমখাত সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে শ্রমিকরা। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে নভেম্বর মাস থেকে শ্রম সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরিষদ (এনটিসিসি) শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রমখাত সংস্কারের কাজ করছে, কিন্তু এখনো শ্রম আইনের সংশোধন ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়নি। নেতারা সরকারের ঐক্যমত্ত কমিশনের শ্রম সংস্কার কমিশন ও নারী কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি কমিশনকে যুক্ত না করার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, শ্রমিকদের দাবি বিবেচানায় অবশ্যই জুলাই সনদে তাদের অধিকার বাস্তবায়নের নিশচয়তার ঘোষণা থাকতে হবে।
বক্তারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো হাজারো জনগণের মধ্যে পোশাকশ্রমিকসহ অন্যান্য শ্রমজীবির শ্রমিকের সংখ্যাই ছিলে বেশী। এতে প্রাণের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশে শ্রমিকের জান-জীবিকা ও মর্যাদা নিশ্চিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা জরুরি।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তারা বলেন, এখন সময় এসেছে বিলম্ব না করে দ্রুত শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কমিটির প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে আইন সংশোধন। বাংলাদেশ শ্রম অধ্যাদেশ ২০২৫ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচনী তফসিলের আগের সময়কেই বেছে নিতে হবে।
নেতারা আরেও বলেন, সারা দেশে আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের হাওয়ায় উত্তপ্ত। এই পরিবেশে কোনোভাবেই যেন বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন এবং শ্রমখাত সংস্কারের কাজ বাধাগ্রস্থ না হয় সে বিষয়ে শ্রম উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মনোযোগ আকর্ষণ করেন।
তারা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রম খাত সংস্কারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ খাতে বিচার-সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। কোনোভাবে নির্বাচনের সাথে একে সাংঘর্ষিক যায়গায় নেওয়ার অপচেষ্টার বিষয় সতর্ক থাকতে সকলকে থাকতে হবে। বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের পোশাক শ্রমিক ও শ্রমজীবিদের শ্রম আইন বাস্তবায়নে আওয়াজ তোলা ও ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান তারা।
সভা সমাপনী কালে তাসলিমা আখতারন নিম্নোক্ত ১০ টি বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আইন প্রণয়নের আহবান জানান।
১. রানা প্লাজা তাজরীনসহ বিভিন্ন কারখানায় অবকাঠামোগত হত্যাকাণ্ড ও মজুরি আন্দোলনে প্রাণহানির বিচার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সম্পন্ন করা ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
২. আইন-আদালতে বাংলা ভাষা ও বৈষম্যহীন ভাষা ব্যবহার করার আইন তৈরি করতে হবে।
৩. জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কমিশন গঠন ও মজুরি নির্ধারণ কাল ৩ বছর অন্তর অন্তর করতে হবে।
৪. মতপ্রকাশ ও সংগঠনের অধিকার নিশ্চিতকরণে শ্রমিকের সংজ্ঞা সম্প্রসারন, ইউনিয়ন রেজিসে্ট্রশন, নির্বাচন, যৌথ দরকষাকষির শর্ত শিথীলকরন। অরেজিসি্ট্রকৃতদের রেজিস্ট্রকালে সুরক্ষা প্রদান করা।
৫. যৌন হয়রানি ও সহিংসতাহীন মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ শ্রম আইনে এর সংজ্ঞা ও দন্ড বিধি প্রণয়ন করতে হবে।
৬. রাষ্ট্রীয় সহায়তায় প্রসূতিকালীন ৬ মাস সবেতন ছুটি ও আন্তর্জাতিক মানদন্ডে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে।
৭. শ্রমিককল্যান তহবিল এবং সেন্ট্রাল ফান্ডের যথাযথ-স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন প্রয়োজনীয়। শ্রম আইনের পঞ্চদশ অধ্যায়: কোম্পানির মুনাফায় শ্রমিকের অংশগ্রহণ অধ্যায়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে করা প্রয়োজন।
৮. শ্রমিক ইতিহাস-ঐতিহাসিক স্থান সুরক্ষা ও স্মৃতি সৌধ- ভাস্কর্য-যাদুঘর-গবেষণাগার গঠনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়া, পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্যক্রম, শিক্ষা কোর্সে শ্রম বিষয়[লেবার স্টাডিজ ] মর্যাদাপূর্ণভাবে উত্থাপন ও যুক্ত করা জরুরি।
৯. শ্রম আইন সংশোধন, শ্রম খাত সংস্কারে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় বৃদ্ধি এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তরসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
১০. শ্রমিক অভিযোগ নিষ্টিত্তিতে অনলাইন ব্যবস্থাকে জোরদার, শ্রমিক ও নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। তথ্যপ্রাপ্তি অধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।