ইমাম মাহাদী (আ.) দাবিকারী নুরালের লাশ কবর থেকে তুলে পোড়াল ‘তৌহিদি জনতা’

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:২১
শেয়ার :
ইমাম মাহাদী (আ.) দাবিকারী নুরালের লাশ কবর থেকে তুলে পোড়াল ‘তৌহিদি জনতা’

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় নিজেকে ইমাম মাহাদী (আ.) দাবিকারী নুরাল পাগলার মৃত্যুর পর তার কবর ভিন্নরীতিতে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরা চলা উত্তেজনার পর আজ শুক্রবার তার কবর ভেঙে মরদেহ মহাসড়কে নিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ছাড়া তার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। স

হামলায় মো. রাশেল মোল্লা (২৮) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি নুরাল পাগলার অনুসারী এবং গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়ন পূর্ব তেনাপঁচা জটুমিস্ত্রি পাড়ার মো. আজাদ মেম্বারের ছেলে।

নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. শরীফ ইসলাম জানান, গুরুতর হামলায় আহতে হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এর আগে আজ শুক্রবার জুমার নামায শেষে গোয়ালন্দ উপজেলা আনসার ক্লাব চত্বর এলাকার তৌহিদি জনতা একত্রিত হয়ে নুরাল পাগলের মাজারে হামলা শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের দুটি গাড়ি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুর করে।

এ সময় নুরাল পাগলের অনুসারী ও উত্তেজিত জনতার ইট, পাথর নিক্ষেপে হযরত আলী (৫০), শাকিব শেখ (১৮), আ. আজিজ (৬০), আলামিন হাবিব (২৬), আলম মিয়া (৫০), মোয়াজ্জেম (২১), রাজু শেখ (৪২), রাতুল (১৭), আলমাস (২৫), হান্নান (২১), সেহেদী রাহেলা (৫৫), মুসা মোল্যা (৫০), মান্নান (৬৫), বিজয় কুমার সাহা (৮০), রাসেল (২৮), রিপন (২৬), সুমি (৩৬), মিথিলা (১৫), উজ্জল (৪২), শিমুল হোসাইনসহ (২৭) অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক সবাইকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। তাদের মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ সময় সেনাবাহিনী ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে চারপাশ থেকে উত্তেজিত জনতা জড়ো হয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে প্রশাসন সরে যেতে বাধ্য হয়। পরে উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলার মাজারে ঢুকে সেখানে বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায়।

পরে বিশেষ কায়দায় দেওয়া নুরাল পাগলার কবর ভেঙে মরদেহ নিয়ে মিছিল করতে করতে ঢাকা-খুলনা মহাড়কে নিয়ে যায়। মহাসড়কের পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে সড়কের ওপর রেখে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে মরদেহ পুড়িয়ে দেয়।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আবারও সেনাবাহিনী, ম্যাজিষ্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, রাজবাড়ী, বালিয়াকান্দি, পাংশা, কালুখালী উপজেলাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে উত্তেজিত জনতা।

জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট নুরাল পাগলার মৃত্যু পর পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে তার নিজ বাড়ির সামনের অংশে দুইতলা সমান (প্রায় ১২ ফুট উঁচু) একটি কাঠামোর ভেতরে কবরস্থ করা হয়। পরে কবরটিকে কাবা শরীফের আদলে রং করা হয় এবং ‘হযরত ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা ব্যানার টাঙানো হয়। এরপর থেকেই স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

এর প্রেক্ষিতে গোয়ালন্দ উপজেলার ইমাম পরিষদ ও তৌহিদী জনতা গত ২৬ আগস্ট বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একাধিকবার মতবিনিময় সভা করেন।

তৌহিদী জনতা ও ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়। তাদের দাবি হলো, কবর থেকে কাবা শরীফের আদলে করা রং পরিবর্তন এবং ‘ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ করা। কবরের উচ্চতা কমিয়ে স্বাভাবিক করা। নুরাল পাগলার ভক্ত ও পরিবারবর্গ প্রথম দুটি দাবি মেনে নিলেও কবরের উচ্চতা স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনার জন্য গত ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় চান। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় নেয়। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে জেলার ৫টি উপজেলাতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নাহিদুল রহমান বলেন, ‘এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আমার গাড়ী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ও থানার ওসির গাড়ী ভাঙচুর করেছে জনতা। পরে নুরাল পাগলের আস্থানায় হামলা চালিয়েছে। তার মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে সঠিক সংখ্যা এখানো বলতে পারবো না। পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

তবে এ বিষয়ে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা বক্তব্যে দিতে রাজি হননি।