অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জেরে জনতার বিক্ষোভ, অভিযান স্থগিত
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান স্থানীয়দের বাধার মুখে সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এ সময় বিক্ষুদ্ধ জনতা প্রতিবাদে প্রধান সড়কে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর ঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানে যান বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। আর সোয়া ১১টা পর্যন্ত চউচ্ছেদ অভিযানকে ঘিরে চলে উত্তেজনা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন।
এতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ এর উচ্ছেদ অভিযানের কর্মিরা যানবাহনসহ আটকা পড়েন। এ সময় প্রধান সড়কের পাশাপাশি বিমানবন্দর সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে উচ্ছেদ কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
এর পরপরই বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ও বিক্ষুদ্ধ জনতা যার যার অবস্থান থেকে সরে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিন শুক্রবার সকালে উচ্ছেদ অভিযানকে ঘিরে শহরের প্রধান সড়কের পাশাপাশি বিমানবন্দর সড়কে নেমে আসে শত শত স্থানীয় জনতা। বিক্ষোভ শুরু হলে চার রাস্তার মোড়ে দেওয়া হয় ব্যারিকেড, জ্বালিয়ে দেওয়া হয় টায়ার। গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়কে ঠেলাগাড়ি ফেলে তৈরি করা হয় প্রতিবন্ধকতা।
স্থানীয় জনতার দাবি, এই উচ্ছেদ কার্যক্রম অবৈধ। জোর করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালিয়ে বসতি ছাড়া করছে বিআইডব্লিউটিএ।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইলিয়াস খান জানান, বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। তবে অবরোধের কারণে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যার ফলে যাত্রীরা আসতে বা বের হতে পারছেন না। সকলে সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পরে তাদের সামাল দিতে ঘটনাস্থলে হাজির হন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তারাও বলছেন, ‘উচ্ছেদ কার্যক্রম নিয়ে পুরো কক্সবাজারবাসী আতঙ্কের পাশাপাশি নানা প্রশ্নের দেখা দিয়েছে।’ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এটা করা হচ্ছে কিনা, তা এখন ভেবে দেখার বিষয় বলেন তারা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল। তিনি বিক্ষুব্ধ জনতাকে লাঠি ফেলে দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘আপনারা সড়ক চলাচল স্বাভাবিক করে দিয়ে বাড়ি ফিরে যান আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে সাড়ে ১১টার দিকে উচ্ছেদ কার্যক্রম না চালিয়ে চলে যেতে বাধ্য হন বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। অনেক উচ্ছেদ অভিযানে আসা সরকারি কর্মকর্তাদের হেনস্থাও করে স্থানীয় জনতা।
উল্লেখ্য, বিআইডব্লিউটিএ-এর সূত্র মতে, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডব্লিউটিএকে বাঁকখালী নদীবন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। প্রজ্ঞাপনে নদী তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। জমি বুঝিয়ে দিতে বারবার জেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা তা দেয়নি। ফলে নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় দখল অব্যাহত ছিল।
যার সূত্র ধরে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যৌথ অভিযান চালিয়ে ৬ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। কিন্তু পরে তা আবারও দখল হয়ে যায়। উচ্ছেদ করা প্যারাভূমিতে ফের নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা।
এর মধ্যে বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামী চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ আগস্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
মামলার রায়ে বলা হয়, কক্সবাজারে বাঁকখালী নদীর বর্তমান প্রবাহ এবং আরএস জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণপূর্বক নদীটিকে সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামী চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
যার সূত্র ধরে শনিবার কক্সবাজার সফরে আসেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে ‘হাইকোর্টের আদেশ মোতাবেক বাঁকখালী নদী দুষণ ও দখলমুক্তকরণের লক্ষ্যে বিশেষ সমন্বয় সভা’য় প্রধান অতিথি ছিলেন। সভা শেষে তিনি কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
এ সময় তিনি কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর দখলদারদের সমন্বিত তালিকা করে উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছেন। এর সূত্র ধরেই সোমবার শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। প্রথম দুইদিনে অন্তত ৭০ একর নদীর জমি উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।