‘চাষীদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৩
শেয়ার :
‘চাষীদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হবে’

দেশের নীতিমালা হলে চাষীদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হবে। এ বিষয়ে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিসিকের চেয়ারম্যান মো সাইফুল ইসলাম।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারে স্থানীয় একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় লবন নীতিমালা প্রনয়নের লক্ষ্যে আয়োজিত এক পরামর্শক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিসিক চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। বলেন।

সভায় বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকার লবণ চাষীদের কল্যানে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। লবণ চাষীদের আধুনিক লবণ চাষের প্রশিক্ষণ ও অর্থিক প্রণোদনা প্রদান, চাষীদের হেলথ কার্ড প্রদান, লবণ চাষীদের ডাটাবেজ তৈরি করবে। দেশের লবণ শিল্পের স্বার্থেই লবণ নীতিমালা তৈরী করার উদ্যোগ নিচ্ছে।’

বিসিক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘লবণ আমদানি কমিয়ে স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে, যাতে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পান। লবণের অফ-সিজনে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা, শ্রম অধিকার, ভোক্তা সুরক্ষা, এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের (খাল খনন, বাঁধ নির্মাণ, আরসিসি রাস্তা, গুদাম ও ছাউনি) প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া লবণখাত কৃষি না শিল্প- এই বিষয়ে স্পষ্ট নীতিনির্ধারণ জরুরি।’

উল্লেখ্য, কক্সবাজারে “ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ইন কক্সবাজার (ISEC)” প্রকল্পের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO), ইনোভিশন কনসালটিং এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর যৌথ উদ্যোগে জাতীয় লবণ নীতিমালা ২০২৬ প্রণয়নের লক্ষ্যে এক আঞ্চলিক পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় নীতিনির্ধারক, লবণ চাষি, মিল মালিক, স্থানীয় প্রশাসন, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণে খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।

এই পরামর্শ সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল মাঠপর্যায়ের লবণ উৎপাদকদের মতামতকে জাতীয় লবণ নীতিমালায় প্রতিফলিত করা। অংশগ্রহণকারীরা লবণ খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে সরকার, বেসরকারি খাত এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সভার ফলাফল একটি পরিমার্জিত নীতিপত্র তৈরিতে সহায়ক হবে যা টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক লবণ শিল্প গঠনে ভূমিকা রাখবে।

সভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) উপ-দপ্তরপ্রধান রুচিকা বেহল, বিসিকের লবণ সেলের প্রধান সরওয়ার হোসেন, ইনোভেশনের এমডি মো রুবাইয়েত সরওয়ার, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবর রহমান, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার লবণ চাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সেক্রেটারি মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের (GK) প্রকল্প সমন্বয়ক মতিউর রহমান, এসিআই-এর ব্র্যান্ড ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম ইমরান, লবণ চাষী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট শাহাব উদ্দিন, ইসলামপুর মিল মালিক সমিতির সভাপতি সামসুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সভায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের ৯৫% লবণ কক্সবাজারে উৎপাদিত হয় এবং প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ও ৪০ হাজার পরিবার এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। খাতটি এখনো নানা সমস্যায় জর্জরিত- অসুস্থ কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতা, সীমিত সামাজিক সুরক্ষা ও মূল্য অস্থিরতা অন্যতম।

এসিআই-এর ব্র্যান্ড ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম ইমরান বলেন, ‘এসিআই প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে কাজ করে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সরাসরি লবণ কৃষকদের কাছ থেকে লবণ সংগ্রহ করি এবং ইতিমধ্যে ১,০০০-এরও বেশি কৃষককে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি ইনোভিশনের সহযোগিতায়। এসিআই ভবিষ্যতেও এই খাতের উন্নয়নে সরকারকে সহায়তা করে যাবে।’

সভায় লবন চাষীরা জানিয়েছেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও কৃষকরা এখনও ন্যায্য দাম পান না। কৃষিজমি রক্ষা, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা নিয়ন্ত্রণ, আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ, ভর্তুকি এবং আর্থিক সহায়তার দাবি জানান চাষীরা। একই সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে ভালো মানের পরিকাঠামো, লাইটিং ব্যবস্থা ও ছাউনি প্রয়োজন। জমি ইজারার খরচ কমানো এবং সিন্ডিকেট ও অনিয়ম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সভায় কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (DIFE) কর্মকর্তারা জানান, লবণ মিলগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন চলছে। এর মাধ্যমে কারিগরি পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে উৎপাদনশীলতা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়ন করা হচ্ছে। স্থানীয় কার্যালয় শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

পরামর্শ সভার বক্তারা মাঠপর্যায়ের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে নীতিমালার প্রণয়ন প্রয়োজন বলে জোর দেওয়া হয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমে একটি টেকসই, উৎপাদনক্ষম ও শ্রমিকবান্ধব লবণ খাত গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।