পল্লী বিদ্যুতের ৮১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর গণছুটি
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রাশেদুল আলম খন্দকারসহ চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে গণছুটির ঘোষণা দিয়েছেন ৮১০ জেলায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে তারা গণছুটির ঘোষণা দিয়ে কর্মস্থল বিদ্যুৎ অফিস ত্যাগ করেন। এতে জেলার ১০টি উপজেলাসহ পাশের সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় ৬ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিন রাত ১২ টার পর থেকে অনেক উপজেলায় বিদ্যুৎ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন লাখো গ্রাহক।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নসহ চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে গত বছরের জানুয়ারিতে আন্দোলন শুরু হয়। ওই আন্দোলনে জড়িত থাকায় ওই বছরের অক্টোবরে ১০ জন কর্মকর্তার নামে মামলা হয়। তাদের মধ্যে বারহাট্টা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ের এজিএম মনির হোসেনসহ চারজনকে ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর নেত্রকোনায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখেন। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।
মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ৩১ আগস্ট আবার আন্দোলন শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর আগে গত মঙ্গলবার নেত্রকোনার এজিএম (প্রশাসন) রাশেদুল আলম খন্দকারকে সাময়িক বরখাস্ত করে পরদিন পটুয়াখালীতে যোগদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরদিন সকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একত্র হয়ে আন্দোলন শুরু করলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। কিন্তু বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার না করে উল্টো সহকারী এনফোর্সমেন্ট কো-অর্ডিনেটর মো. ওমর ফারুক, প্রকৌশলী মো. আবু হাসান, বিলিং সহকারী জ্যাকুলিন বাশারকে বরখাস্ত করা হয়। এর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার থেকে সমিতির অধীনে কর্মরত ৮১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী গণছুটির ঘোষণা দেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগকেন্দ্রের মুঠোফোন, গাড়ির চাবিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সদর দপ্তরের মহাব্যবস্থাপকের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে কর্মস্থল অফিস ত্যাগ করেন।
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে দেখা যায়, কোনো কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। মহাব্যবস্থাপক আকরাম হোসেন বিকেলে নিজ কক্ষে থেকে তালা লাগিয়ে চলে যান। কার্যালয়ের প্রধান ফটক ও ভেতরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্য মোতায়েন আছে।
কার্যালয়ের বাইরে নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে ছয়জন আন্দোলনকারীকে অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণের মাধ্যমে তারা কাজ করতে চান। তাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। আরইবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চিকিৎসা ভাতা পান দেড় হাজার টাকা আর সমিতির ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ‘গত ১৭ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সমিতির ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ৩১ আগস্ট থেকে চার দফা দাবিতে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে অবস্থান কর্মসূচি চলছে। কর্মসূচি চলাকালে আজ পর্যন্ত ৯ জনসহ মোট ৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে আরইবি।’
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক আকরাম হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জেলাসহ পাশের দুটি উপজেলায় বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সদর দপ্তরসহ জোনাল ও সাব-জোনাল ১২টি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণছুটিতে গেলেও ২০টি উপকেন্দ্রে লোকজন রয়েছে। তবে আন্দোলন প্রত্যাহার না করলে বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হবে। আরইবি যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, সেই অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে। ওই সমিতির আওতায় জেলাজুড়ে ২০টি সাবস্টেশন ও ২৬টি অভিযোগ কেন্দ্র রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে সদ্য যোগদানকরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত তারা ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন।’