টেলিভিশন নাটকে দুর্দশা ইউটিউবেও খরা

ফয়সাল আহমেদ
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
টেলিভিশন নাটকে দুর্দশা ইউটিউবেও খরা

‘আমার কাছে টিভি নাটকের যে ধরনের গল্প আসছে তাতে নতুনত্ব নেই। জুতসই চরিত্রও পাচ্ছি না। এ কারণে সব সময় টিভিতে কাজ করছি না। অবাক লাগে, ২০২৫ সালে এসে এমন সব চিত্রনাট্যে কীভাবে কাজের উদ্যোগ নেন নির্মাতা বা প্রযোজকরা। সেগুলো আবার চ্যানেল থেকে পাসও করা। মানুষের রুচি ও মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, ভাবনার জগৎ খুলেছে। এখনও যদি অন্য রকম স্ক্রিপ্ট নিয়ে না আসি তাহলে আগামীর পথ পাড়ি দেব কীভাবে?’ কথাগুলো বলেছেন ?নন্দিত অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ। টিভি নাটকের এমন দুর্দশার কথা শোনা যায় অনেকের মুখেই। টিভি নাটকের বাস্তবিক চিত্র হচ্ছে- কাজের অভাবে বসে আছেন অনেক অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা।

টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়, গেল কোরবানির ঈদে গত চার বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম নাটক প্রচারিত হয়েছে। টেলিভিশন প্রযোজকদের এ সংগঠন থেকে আরও জানা যায়, শুধু ঈদেই নয়, ঈদের পরও নাটক নির্মাণের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। যে কারণে বেশির ভাগ শিল্পী ও কলাকুশলীই শুটিং থেকে দূরে। নাটক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বেকার হয়ে পড়ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিনেতা বলেন, ‘অনেক নির্মাতার সঙ্গে কথা হচ্ছে। ফোন দিয়ে কাজের খবর নিচ্ছি। সবার একই কথা, তাদের হাতে কাজ নেই। প্রতিদিন কতজনকে এভাবে ফোন দেওয়া যায়! এতটাই কাজ কমে যাচ্ছে যে প্রতিদিন দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি।’

প্রান্তিক দর্শকের কাছে একসময় বাংলা নাটক ছিল বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। বিশেষ করে গ্রামীণ দর্শক। সেটা ছিল টেলিভিশনে। তাও আবার বিটিভিতে। এরপর স্যাটেলাইটের কল্যাণে দর্শকরাও ভিন্ন স্বাদের নাটকের সঙ্গে পরিচিত হন। তবে এ মাধ্যমটির স্থায়িত্বও বেশি বছর হয়নি। এরপর শুরু হয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। আর এতেই কমেছে টিভি নাটকের নতুনত্ব। একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, ‘এখন শিল্পটাকে টোটালি সরিয়ে ব্যবসাকে মুখ্য করা হয়েছে। যেখানে ব্যবসা প্রধান হয়ে যায়, সেখানে মানুষের প্রবণতা হয়, কীভাবে আরও বেশি ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়া যায় এবং বেশি অর্থ উপার্জন করা যায়। আর শিল্পাঙ্গনের মানুষের সেটাই যদি মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে যায়, তখন এদিক-ওদিক করার একটা ইচ্ছা তাদের মধ্যে জেগেই ওঠে। সেগুলোরই প্রতিফলন এখন সবাই দেখছি। আগে যে ধরনের বন্ধনগুলো ছিল, সামাজিক বন্ধন, মূল্যবোধ সেগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। এখন তো নাটক-সিনেমায় মজা দেওয়াটাই মুখ্য ব্যাপার হয়ে গেছে। নতুনত্ব থাকবে কীভাবে?’ একই প্রসঙ্গে অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন বলেন, ‘নাটকের মাধ্যম বদলেছে, তবে গল্প বলার দায় কিন্তু বদলায়নি। কিন্তু নতুন কিছু দেখাতে হলে বাজেট একটা বড় বিষয়। বাজেট থাকতে হবে। পর্যাপ্ত বাজেট। তা না হলে ভালো কিছু করা সম্ভব না।’

তারপরও টিভি নাটক হচ্ছে। এ নিয়ে নাট্য প্রযোজক সমিতির নেতা সাজু মুনতাসির জানান, কিছু কাজ হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ চ্যানেল এখন আর এক ঘণ্টার নাটক প্রচার করে না। যে কারণে ইউটিউবের ওপর নির্ভর করে নাটক তৈরি হচ্ছে। সেখানে হাতে গোনা কিছু কাজে লগ্নি ফিরে আসছে। সিংহভাগ প্রযোজক অর্থ তুলতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মূলত চ্যানেল এখন খুব বেশি বিজ্ঞাপন পাচ্ছে না। স্পনসরের সংকট রয়েছে। যে কারণে আমাদের প্রযোজকরা কেউ লস দিয়ে কাজ করতে চাইছেন না। কারণ, ইউটিউব থেকেও আয় কমেছে, ব্র্যান্ডিং নেই। এখন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটার ওপর নির্ভর করে সামনে লগ্নি হবে। সবাই স্থির অবস্থার অপেক্ষায় রয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেন, ‘টিভি নাটকে এখন সময় নেই, ধৈর্য নেই। তবে তাদের নিজস্ব একটা স্টাইল রয়েছে। কিন্তু সেই স্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে। না হলে কিন্তু দর্শক আর টিভি নাটকের দিকে মুখ ফেরাবে না।’