যারা ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত
ফ্যাসিবাদকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম আয়োজিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে ভুক্তভোগী। সবাই সর্বনিম্ন ৫০০ মামলায় আক্রান্ত। আমরা যারা আক্রান্ত, কিন্তু আমাদের সামনে অন্য কেউ লাঞ্ছিত হোক, সেটা চাই না, কিন্তু যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়।’
বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, ‘‘জাতীয় পার্টির দায় এখন বিএনপিকে নিতে হবে।’’ বিএনপি তো এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই। এখনো তো অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। তাহলে আপনি (জাতীয় পার্টির মহাসচিব) কিসের দায়ের কথা বলছেন?’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘নুরুল হক নুর ডাকসুর সাবেক ভিপি। তাকে একটি কার্যালয়ের মধ্যে আক্রমণ করা হলো। আমরা প্রথমে শুনেছিলাম জাতীয় পার্টির সঙ্গে গোলমাল, কিন্তু তাকে (নুর) যে আঘাত করছেন, সেই লাল শার্ট পরা লোকটা কে? যে কেউ কারও বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে, এটা গণতন্ত্রের স্বীকৃত একটা পন্থা।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিনি বলেন, ‘যারা রাজনীতির কথা বলছেন, তারা বিএনপির সমালোচনা করতে পারেন। বিএনপির যদি কোথাও সমালোচনা করার থাকে, তাহলে বিএনপি নিজেই তা করবে, কিন্তু আপনি কেন বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলছেন? বিএনপি কি আপনাদের দায়িত্ব নেবে নাকি? আপনারা কারা? যখন ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম এবং সাইফুল ইসলাম হিরু গুম হন, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? যখন ছাত্র এবং যুব নেতারা গুম হন, তখনও জাতীয় পার্টিকে দেখা যায়নি।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যখন ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার নেই, সেখানে কুকুর-বিড়াল এবং গরু-ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই নির্বাচনে যাবো না, যাবো না করতে করতে আপনারা (জাতীয় পার্টি) গেলেন। ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর, প্রায় ৪৫ জন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হলো। বিএনপি নির্বাচনে আসুক, সেটা শেখ হাসিনা চায়নি। সেদিন জাতীয় পার্টি কী ভূমিকা রেখেছে?’
তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে জি এম কাদের ভারতে গেলেন। তখন সাংবাদিকরা তাকে (জি এম কাদের) প্রশ্ন করলেন, ‘‘আপনার সঙ্গে কি কথা হলো?’’ তখন জি এম কাদের বলেছেন, ‘‘ওদের (ভারত) পারমিশন ছাড়া কিছু বলতে পারব না।’’ এই হচ্ছে জাতীয় পার্টি। আপনি কী ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল? নাকি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল? এই আপনাদের মেরুদণ্ড? এই আপনাদের নীতি এবং আদর্শ? এই আপনাদের চরিত্র?’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আমরা কোনো মব সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না। কে রাজনীতি করবে কি করবে না, সেটা আইনের ব্যাপার। এটা সরকারের ব্যাপার। বিএনপি কোথাও কোনো মব সংস্কৃতি তৈরি করেনি এবং বিএনপি উশৃঙ্খল জনতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। কিন্তু বিএনপির তো একটা অ্যানালাইসিস আছে, জাতীয় পার্টির ভূমিকা কি ছিল। আরও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ভূমিকা কি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘রক্তপিপাসু শেখ হাসিনার আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে কারা রক্ষা করেছে, কারা ১৬ বছর জনগণের লক্ষ-কোটি টাকা পাচারের সুবিধা করে দিয়েছে। কারা এই দেশকে আওয়ামী ভয়ংকর স্বেচ্ছাতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব পালন করেছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয় পার্টি। আপনারা একটা কুলিং টাইম চান। ২০০৮-২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা ২ বছরের একটা কুলিং টাইম দিয়েছেন। তার পরে টর্চার করেছেন। বিএনপি কখনো টর্চারে বিশ্বাস করে না। বিএনপি কোনো অবস্থাতেই বেআইনিভাবে কোনো নির্যাতন, অত্যাচারে বিশ্বাসী নয়।’
উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।