এক মঞ্চে দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি

সাক্ষাৎকার

তারেক আনন্দ
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
এক মঞ্চে দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি

ইমন চৌধুরী। যাকে এক নামে সবাই চেনেন। সংগীত পরিচালক হিসেবে যেমন সুনাম কুড়িয়েছেন, গায়ক হিসেবেও তিনি সফল। সম্প্রতি ‘কোক স্টুডিও বাংলা’ থেকে হাশিম মাহমুদের কথা ও সুরের ‘বাজি’ গানটি নিয়ে ফিউশন করেছেন। গানটি ইতোমধ্যেই শ্রোতাদের মন ছুঁয়েছে। এই গান তৈরির নেপথ্য গল্প ও সংগীতে বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তারেক আনন্দ

‘বাজি’ গান নিয়ে কি বাজি ধরেছিলেন?

আসলে আমি কোনো বাজিই ধরিনি।

ক্রিয়েশনের সময় কী মনে হয়ছেলি?

সত্য কথা বলি, আমি খুবই চেয়েছিলাম, বাংলাদেশ সমতল, পাহাড়, নদীপারের মানুষ। ছোট্ট একটা দেশ। ছোট্ট জায়গায় এত ভ্যারিয়েশন। এক মঞ্চে দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের দেশের মানুষরা কেমন, মিউজিক্যাল জার্নি কেমন, আমরা কীভাবে গানবাজনা করি। পাহাড়ের মানুষরা কীভাবে গান করে। যতটুকু পারি, সেটাই চাওয়া ছিল। এটার নন্দনতত্ত্ব নিয়ে চিন্তা ছিল বেশি।

পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ‘বাজি’ গানের জন্য কতদিন সময় নিলেন?

২০২৩ সাল থেকে পরিকল্পনা করি। ২০২৩-এর শেষের দিকে, মানে এই সময়ে কাজ শুরু করি। এর পর থেকেই একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া। কাদের সঙ্গে কাজ করা যায়, কীভাবে সংযুক্ত করা যায়। এই গানের সঙ্গে কোন ধরনের ইন্সট্রুমেন্ট ম্যাচ করবে তা নিয়ে ভাবতে হয়েছে। লোকজসংগীত, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাদ্যযন্ত্রের মাধুর্য এবং টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী ‘ধুয়া’ গানের দলকে সংযুক্ত করা, এর পর বংশীবাদক কিয়ো উ প্রু মারমা এবং তার দাদি ম্রাকোইচিং মারমা। ম্রাকোইচিং গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন মারমা ভাষায়। হাশিম ভাইয়ের কথায় মিল রেখে, ‘আসমানে তোর ছায়ারে কন্যা’ও যেন ঠিক থাকে, সবগুলোর সঙ্গে মণিপুরীর ঢোল বেজেছে। চেষ্টা করেছি, সবাইকে একসঙ্গে করার।

প্রকাশের পর শ্রোতাদের কাছ থেকে কতটা ভালোবাসা পাচ্ছেন?

খুবই ভালো। কমবেশি সবাই প্রশংসা করছে। সাধারণ মানুষ ভালোবেসে নিজেরা কাভার করছে। এটাই সবার জন্য প্রাপ্তি। এই গানে কয়েকটা কমিউনিটি ছিল। সবাই প্রাউড ফিল করছে। টাঙ্গাইলের ‘ধোয়া’ গানের দল, বান্দরবানে সবাই, মণিপুরী। এক কথায় সবাই খুশি। এটাই আমি চেয়েছিলাম।

এই গানটি করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?

প্রতিবন্ধকতা ছিল যেটা সেটা হলো ওনাদের সবাইকে পাওয়াটাই ছিল বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রতবিন্ধকতা ফিল করিনি।

কোক স্টুডিওর সঙ্গে এটা আপনার দ্বিতীয় গান। কোক স্টুডিওর সঙ্গে কাজ করতে গেলে কি বাড়তি কোনো চাপ নিতে হয়?

কোক স্টুডিও বাংলা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম। আমি কোনো চাপ অনুভব করি না, আনন্দ পাই। সিনেমার গান বলেন আর নাটকের গান- সাবজেক্ট থাকেই। এখানে কাজের ফ্রিডম আছে। কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয় না। ওনাদের অলওয়েজ সহযোগিতা থাকে। ক্রিয়েটিভ জায়গায় হস্তক্ষেপ করে না। ওনারাও চায় আমাদের কালচারকে ইন্টারন্যাশনালি প্রেজেন্ট করতে। কোক স্টুডিও ছাড়া আমাদের ইন্টারন্যাশনালি কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। আমরা এ রকম যখন গান পাই, তখন কার্পণ্য করি না। আমাদের দেশকে প্রেজেন্ট করি।

মাঝে মাঝে কোক স্টুডিওর গান নিয়ে বিতর্ক হয়। তাদের প্রতি আপনার কোনো পরামর্শ?

আমাদের এখানে কোক স্টুডিওর বয়স খুবই কম। মাত্র থার্ড সিজন চলছে। যেখানে অন্য দেশগুলোতে নয়-দশ সিজন পার করেছে। কোক স্টুডিও ফিউশনধর্মী কাজ। এটা খেয়াল রাখতে হবে। আমরা এখানে অনেকগুলো জেনারেশনকে কানেক্ট করছি। আমাকে অনেক শিশু ভিডিও পাঠিয়েছে। ছোট বয়স থেকে শুরু করে বড়রা গান শুনছে। এখানে কারোর ভালো লাগবে, কারোর লাগবে না। কেউ নানা পরামর্শ দেবে। এটা সব সময় থাকবে। তাই বলে তো আমরা নিজেদের কালচার প্রেজেন্টেশন অফ করব না। কোক স্টুডিওর প্রতি পরামর্শ বা শুভকামনা যাই বলেন না কেন, আমি বলব এভাবেই চলতে থাকুক। কাজ করতে থাকলেই অনেক ভালো কিছু চলে আসবে।

শায়ান চৌধুরী অর্ণবের সঙ্গে আপনার বোঝাপড়া কেমন?

অর্ণব ভাই অদ্ভুত মানুষ। অর্ণব ভাইয়ের মতো বড় ভাই পাওয়া আসলে ভাগ্যের ব্যাপার।

কেন অদ্ভুত, শুনতে চাই।

অর্ণব ভাই পুরোপুরি একজন শিল্পী। পিওর আর্টিস্ট বলতে যা বোঝায়। আমাদের এই জেনারেশনে অর্ণব ভাই একজন। আমি অলওয়েজ একটা কথা বলি অর্ণব ভাইকে। অর্ণব ভাই আপনার মিউজিক পৃথিবীর কারোর সঙ্গে মিলে না। আপনি একটা কর্ড বাজাইলেও কারোর সঙ্গে মিল থাকে না। একদম অর্ণবীয়! ওনার অ্যারেঞ্জমেন্ট, কম্পজিশন, পৃথিবীর অন্যদের থেকে আলাদা। একমাত্র উনিই পারেন। এটা মিরাকল। হয় না, আমরা একট কিছু করলে ওটার সঙ্গে একটু মিল, বাট ওনারটা বোঝা যায় না। ওনারটা একান্তই ওনার। আমি মনে করি, এই সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে নিখুঁত শিল্পী অর্ণব ভাই। উনি সব সময় আমাদের সবাইকে হেল্প করেন। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান। এটাই ওনার সবচেয়ে বড় গুণ।

নতুন আর কী কাজ করছেন? বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?

সিনেমা, ওটিটির জন্য গান করছি, বিজ্ঞাপনের কাজ করছি। নিজেদের জন্যও গান করছি। আমাদের গানের দল ‘বেঙ্গল সিম্ফনি’। এটি আমাদের ২৫ জনের দল। এই টিম নিয়ে আমরা দেশের বাইরে গিয়ে শো করছি দীর্ঘদিন হলো। ‘বেঙ্গল সিম্ফনি’ নামে যাত্রা শুরু করি এ বছরের শুরু থেকে। সম্প্রতি জাপানে শো করে এলাম। এ ছাড়া ২ সেপ্টেম্বর ও ৫ সেপ্টেম্বর আমাদের শো আছে। দেশের বাইরের জন্য কথাবার্তা চলছে। আমাদের টিমের অন্যতম সদস্য হলেন- ইমন চৌধুরী (ভোকাল, সংগীত পরিচালক) আরফান শিবলু (ভোকাল), মিথুন চক্র (ড্রামস), সুমন (বাঁশি), মিথুন দে (বেইজ গিটার), সজল (ঢোল), লিংকন (গিটার), লিটন (পারকাশন), অন্তরা (কয়ার), মিম (কয়ার), বুলেট (পিয়ানো)।