’নুরাল পাগলের কবর ঠিক না করলে কঠোর আন্দোলন’
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কথিত ইমাম মেহেদী দাবিদার নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের (৮৫) কবর ঘিরে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনায় উপজেলা মডেল মসজিদের নিচতলায় উপজেলা ইমাম কমিটি ও তৌহিদী জনতার উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. জালাল উদ্দিন প্রামানিক। আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. ইলিয়াস মোল্লা, গোয়ালন্দ সরকারি কামরুল ইসলাম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কে. মোহিত হীরা, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আইয়ুব আলী খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন, পৌর বিএনপি সভাপতি মো. কাশেম মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইদুল ইসলাম, ইদ্রিসিয়া মাদ্রাসার নায়েবে মোহতামিম মুফতি শামসুল হুদা, উপজেলা ইমাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবুল হোসাইন, উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম মুফতি আজম আহমাদ, বাজার বড় মসজিদের ইমাম হাফেজ আবু সাইদসহ উপজেলার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তৌহিদী জনতা।
সভায় জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘ইমাম মেহেদী দাবিদার নুরা পাগলের মাজার ও কবর নিয়ে আমাদের ৩টি দাবি ছিল। এর মধ্যে ২টি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে একটি দাবি এখনও বাকি আছে, তা হলো ১২ ফুট উঁচু স্থানের কবর নিচু করা। এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। নুরাল পাগলের পরিবার গত শুক্রবার পর্যন্ত সময় নিয়েছিল। পরে আবারও এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা সময় পেয়েছেন। তারপরেও যদি কোনো ফয়সালা না হয় তাহলে আমরা আগামী শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেব। প্রয়োজনে ‘মার্চ টু গোয়ালন্দ’ কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়া হবে। হাজার হাজার তৌহিদী জনতা এক হয়ে আন্দোলনে নামবে। গোয়ালন্দের বুকে কোনো ভন্ড ইমাম মেহেদী দাবিদারের কবর রাখা হবে না। প্রয়োজনে কবর ভেঙে চুরমার করা হবে।
এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেকে।
গত সোমবার সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সদস্যরা। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুল ইসলাম, থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম, গোয়ালন্দ ইমাম কমিটির সদস্যবৃন্দ, ১৬ সদস্য বিশিষ্ট তৌহিদী জনতা প্রতিনিধি দল এবং ১০ সদস্য বিশিষ্ট নুরাল পাগলার ভক্ত-সমর্থক ও পরিবারবর্গ নিয়ে বৈঠক করেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তারের সভাপতিত্বে পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান, জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা ইলিয়াছ মোল্লা, জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর হাসমত আলী হাওলাদার সহ আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সভায় তৌহিদী জনতা ও ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে ৩টি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো কবর থেকে কাবা শরীফের আদলে করা রং পরিবর্তন, ‘ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ এবং কবরের উচ্চতা কমিয়ে স্বাভাবিক করা। নুরাল পাগলার ভক্ত ও পরিবারবর্গ প্রথম ২টি দাবি মেনে নিলেও কবরের উচ্চতা স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনার জন্য ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় চান।
সভা শেষে তৌহিদী জনতা ও ইমাম পরিষদ তাদের ঘোষিত গত ২৬ আগস্টের বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টির স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট নুরাল পাগলার মৃত্যু পর তার পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে তার নিজ বাড়ির সামনের অংশে দুইতলা সমান (প্রায় ১২ ফুট উঁচু) একটি কাঠামোর ভেতরে কবরস্থ করা হয়। পরে কবরটিকে কাবা শরীফের আদলে রং করা হয় এবং ‘হযরত ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা ব্যানার টাঙানো হয়। এতে করে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করে।