নবাবগঞ্জে শতবর্ষী নৌকাবাইচ, লক্ষাধিক লোকের সমাগম

দোহার নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
৩০ আগস্ট ২০২৫, ২৩:১৬
শেয়ার :
নবাবগঞ্জে শতবর্ষী নৌকাবাইচ, লক্ষাধিক লোকের সমাগম

একশত বছরের ঐতিহ্য রক্ষার ধারাবাহিকতায় ইছামতী নদীর কলাকোপা পয়েন্টে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আজ শনিবার বিকেলে কলাকোপা গ্রামবাসী এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন।

জানা যায়, ঢাকার দক্ষিণ প্রান্তের লাখো মানুষের আগ্রহের এ নৌকাবাইচকে ঘিরে রয়েছে নানা গল্প। কালের বিবর্তনে অনেকটাই হারিয়ে গেছে এসব পুরনো সংস্কৃতির ইতিহাস আর ঐতিহ্য। তবে বর্ষা মৌসুমে অতীতের সেই যৌবন না থাকলেও কলাকোপা নৌকাবাইচের আনন্দ উল্লাস যেন এখনো এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে উৎসবের সাড়া জাগায়। লক্ষাধিক নারী, পুরুষ, শিশুরা উৎসবের আমেজে মিলিত হয়।

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় ৬টি ঘাসি নৌকা, ১টি চৈরা নৌকা ও কোষা নৌকা মধ্যে চলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। এতে আগলার লিটন-২ চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া মামা ভাগ্নে ২য় ও আব্দুল খালেক ৩য় হয়। চ্যাম্পিয়ন নৌকার মালিকে একটি মোটরসাইকেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

সরজমিনে দেখা যায়, বাহারি সাজে নৌকা সাজিয়ে মাঝি মাল্লা নিয়ে অনেক নৌকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ইছামতীর দু’তীর জুড়ে বসেছে মেলা। সকলেই বাইচ উপভোগ করতে কেউ ব্রিজ, কেউ বা নৌকায় বা গাছের ডালে বসেছে বাইচ উপভোগ করছে। উৎসুক নারী পুরুষ তরুণ তরুণীর উপস্থিতি যেন এ বাইচকে বর্ণিল করে তুলেছে। ইছামতীর দুই পাড় জুড়ে প্রায় ৫কিলোমিটার এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। 

পুরনো দিনের সেই স্মৃতি স্মরণে রাখতে বাইচে এসেছেন সমির মোল্লা। তিনি জানান, নিজেই এক সময় মাঝি হয়ে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় আসতেন। কলাকোপা বাইচ এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের সাক্ষর, তাই দেখতে আসা। আজ নদী বা বিলের সেই রূপ যৌবন নেই। তাই “মন পবনের বৈঠা নেরে” গানের সুর তুলে মাঝিরাও এখন তেমন আনন্দ পায় না। 

বাইচ দেখতে এসেছেন দোহারের বাচ্চু মিয়া ও তার সহপাঠীরা। তিনি জানান, এখন তো আগের দিনের মতো নেই। তবু কলাকোপা নৌকাবাইচে যেন ভিন্ন রকমের আনন্দ আমেজ। তাই সবাইকে নিয়ে আসা।

এদিকে নৌকাবাইচকে ঘিরে নদীর দুই পারে বসেছে মেলা। পাঁপড়, নিমকি, পিয়াজু, চানাচুরসহ নানা খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। এছাড়া নাগর দোলা, বেলুন উড়ানোসহ শিশুদের জন্য রয়েছে রকমারি খেলার প্রদর্শনী। 

মানিকগঞ্জের জামসার সিদ্দিক মিয়া (৭০) বলেন, 'জন্মের পর থেকেই খানেপুর, দাউদপুর, কলাকোপা, দিঘীরপাড়, কোমরগঞ্জ বাইচ দেখে আসছি। এক সময় বেশ জৌলুস ছিল। নদীর দু’পাড় ছাপিয়ে আশপাশের বিলের মাঝেও সারি সারি নৌকা থাকতো। অনেকে কলার ভেলা নিয়েও বাইচ দেখতে আসতো। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। সৌখিন মানুষগুলোও ফুরিয়ে গেছে।'

হাজী মো. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক। এ সময় তিনি বলেন, 'শত বছরের প্রাচীন এ নৌকাবাইচ মানুষের মনে আনন্দের সঞ্চার করে। নবাবগঞ্জে নদীবিধৌত অঞ্চলের মানুষ বর্ষাকালে নৌকাবাইচকে উৎসব মনে করে। আমজনতার অংশগ্রহণই তা প্রমাণ।'

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবুল কালাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন, নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম, নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুস সালাম, সহ সভাপতি আবু শফিক খন্দকার মাসুদ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদ আল মামুন সহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।