গণতান্ত্রিক আচরণ প্রদর্শনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ৪৬ নাগরিকের আহ্বান
দেশের সব শ্রেণি-পেশা, রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং ব্যক্তির প্রতি গণতান্ত্রিক আচরণ প্রদর্শনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ৪৬ নাগরিক। আজ শনিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অভিযোগ রয়েছে ওই মিছিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস এবং পিলেট বুলেট ছুড়েছে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। একই ইস্যুতে রাস্তায় নামা ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা হয়। যদিও বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে সমালোচনা করা হয়। ডিএমপি কমিশনার দুঃখ প্রকাশ করেন। এ ঘটনা তদন্তে কমিটি করার ঘোষণাও দেন তিনি। তবে সরকার ও পুলিশ কর্মকর্তার আশ্বাস হাওয়ায় মিলিয়ে যায় খুব দ্রুত।’
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর যৌথ বাহিনী হামলার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একজন নেতা ও তার দলের ওপর এ ধরনের হামলায় আমরা শঙ্কিত। প্রধান উপদেষ্টাও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা সেই অশ্বাসের বাস্তবায়ন দেখতে চাই দ্রুত। এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনবান্ধব করে গড়ে তোলার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।’
এতে বলা হয়, ‘কখনো দেখা গেছে মব তৈরি করে ভিন্নমতের লোকজনকে পেটানো হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিগ্রহের শিকার ব্যক্তিদের আটক বা গ্রেপ্তার করছে। মব যারা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির আমাদের সামনে নেই। প্রতিপক্ষ বা বিরোধীদের দমনের এসব পদ্ধতি ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের আমলের কথা মনে করিয়ে দেয়।’
অনেক প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, জুলাই শহিদদের অবমাননার শামিল বলেই মনে করছেন বিবৃতিদাতারা।
তারা বলেছেন, পলাতক ফ্যসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য হামলা, গায়েবি মামলা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে যুক্ত ছিল। যার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী-জনতা মরণপণ লড়াই করে। সেই লড়াইয়ে টিকতে না পেরে শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতারা নন; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যও পালিয়ে যান।
গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবিক ও গণতান্ত্রিক আচরণ জনগণের অন্যতম প্রধান প্রত্যাশা। তবে সব দেখে মনে হচ্ছে পরিস্থিতি উল্টো। একদিকে জনগণের জান-মাল, ধর্মীয় স্থাপনা, বিনোদনের জায়গা, জাতীয় সম্পদ, পাবলিক প্লেসের নিরাপত্তায় দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলা করার অভিযোগ রয়েছে। আবার অন্যদিকে নিরস্ত্র শিক্ষার্থী রাজনৈতিক জমায়েত, গোষ্ঠি, ভিন্নমতের লোকদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। মব নিয়ন্ত্রণেও তারা ব্যর্থ, যা বেদনাদায়ক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, জুলাই অভ্যুত্থানে জনগণের ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সভা, সমাবেশ, মিছিল নিয়ন্ত্রণে গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করবে। মানবাধিকার নীতির প্রতি অনুগত থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে বিরত থাকবে। জনগণের ব্যক্তিগত, ধর্মীয় সম্পদ ও প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সজাগ থাকবে। পাশাপাশি অবশ্যই জাতীয় ও প্রাকৃতিক সম্পদের নিরাপত্তায় তাদের সক্রিয় থাকতে হবে।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন কবি কাজল শাহনেওয়াজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, প্রবাসী লেখক ও নৃবিজ্ঞানী সায়েমা খাতুন, অর্থনীতিবিদ জিয়া হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আ আল মামুন, লেখক ও সংগঠক নাহিদ হাসান, নির্মাতা আশফাক নিপুন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আর রাজী, লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোশরেকা অদিতি হক, শিল্পী অমল আকাশ, শিল্পী এএইচ চঞ্চল, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, কবি ও সংগঠক চিনু কবির, বিজ্ঞানী মাহবুব সুমন, লেখক ও গবেষক মীর হুযাইফা আল মাহমুদ, কবি ও অধিকারকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মা আলম, প্রকাশক মাহাবুব রাহমান, প্রকাশক সাঈদ বারী, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ, পরিবেশকর্মী আবুল কালাম আল আজাদ, কথাসাহিত্যিক গাজী তানজিয়া, কবি ও সংগঠক মোহাম্মদ রোমেল, কথাসাহিত্যিক অস্ট্রিক আর্যু ও পরিবেশবিদ মোহাম্মদ আরজু।
এ ছাড়া স্বাক্ষর করেন সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন, কবি ও লেখক তুহিন খান, কবি পলিয়ার ওয়াহিদ, লেখক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট সাদিক মাহবুব ইসলাম, গবেষক শাহাদাৎ স্বাধীন, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট পারভেজ আলম, কবি নকিব মুকশি, কবি হাসান জামিল, কবি অর্বাক আদিত্য, রাজনৈতিক কর্মী উৎসব মোসাদ্দেক, সাংবাদিক আরাফাত রহমান, প্রকাশক দীপক কুমার রায়, কবি মিসবাহ জামিল ও গবেষক রাহুল বিশ্বাস।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার