হাতুড়িপেটার পর মুখে প্রস্রাব, কোদাল দিয়ে হত্যা শেষে নারীকে মাটিচাপা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
৩০ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৪৫
শেয়ার :
হাতুড়িপেটার পর মুখে প্রস্রাব, কোদাল দিয়ে হত্যা শেষে নারীকে মাটিচাপা

তাল কুড়াতে ঘর থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন কমলা বেগম (৫৫) নামের এক নারী। একই দিন দুপুরে তার গলাকাটা মরদেহ মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৩২ ঘণ্টা পর আজ শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত আশিক মিয়াকে (২৬) আটক করে থানা পুলিশ। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ভূতুলিয়া গ্রামে। অভিযুক্ত আশিক মিয়া ওই গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে। নিহত কমলা বেগম একই গ্রামের কদম আলীর স্ত্রী।

এ ঘটনায় নিহতের স্বামী বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার রাতেই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলার একমাত্র আসামি হসেবে আশিককে গ্রপ্তার করে থানা পুলিশ। একই সঙ্গে পুলিশের অভিযানে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি ও কোদাল উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশিক জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে আশিক ইটের খোয়া ভাঙ্গতে হাতুড়ি ও কোদাল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। পরে ঘটনাস্থলে একটি তাল গাছের পাশে বসে ইট ভাঙ্গতে থাকেন। ভোর পাঁচটার দিকে ওই গাছের নিচে পড়ে থাকা ৪-৫টি তাল কুড়িয়ে নেন কমলা। পরে সেখানে আশিকের জমানো তাল নিতে চাইলে তাদের দুইজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আশিক কমলাকে চড় মারলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন আশিক কমলার মাথায় হাতুড়িপেটা করে। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে কমলার মুখে প্রস্রাবও করেন আশিক। টানা-হেঁচড়া করে কমলাকে পাশে ঝোপের কাছে নিয়ে যায়। কাউকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার ভায়ে কমলার গলায় কোদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন আশিক। পরে মরদেহ মাটিতে গর্ত করে পুতে রেখে বাড়ি চলে যান তিনি।

এর আগে স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে কমলা প্রতিবেশীর গাছ থেকে তাল কুড়াতে যান। পরে আর বাড়িতে ফেরেননি। ওই দিন দুপুরে মাঠের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরেন কদম আলী। স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে বিষটি প্রতিবেশীদের জানান। পরে তারাও খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই তাল গাছের নিচে গিয়ে টানা হেঁচড়া করে নেওয়া পায়ের দাগ দেখতে পান। ওই দাগের সূত্র ধরে এগিয়ে গিয়ে গর্তে পুঁতে রাখা কমলার মরদেহ দেখতে পান তারা।

নিহতের স্বামী কদম আলী বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৫টার দিকে আমি কাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হই। তখন স্ত্রী কমলাও বের হয়ে বাড়ির কাছে একটি গাছতলায় তাল কুড়াতে যায়। দুপুর ১২টার দিকে আমি বাড়ি ফিরে কমলাকে খোঁজ করি। এরপর স্বজন ও প্রতিবেশীরাও খোঁজ শুরু করেন। বেলা দেড়টার দিকে এক প্রতিবেশী ঝোপঝাড়ের ভেতর খুঁড়ে রাখা মাটি দেখে সন্দেহজনক মনে করে। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসে মাটি খুঁড়ে গলাকাটা অবস্থায় কমলার লাশ দেখতে পাই। কী কারণে আমার স্ত্রীকে এভাবে হত্যা করা হলো, বুঝতে পারছি না।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। নিহতের স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ওই মামলায় আসামি আশিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি হত্যাকাণ্ডের দায় শিকার করেছেন।’