ভূমি অফিসের দায়িত্বে আছেন একজন ঝাড়ুদার
সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা। ভূমি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথি, সেবা গ্রহীতাদের সঙ্গে নামজারি নিয়ে দেন-দরবার করছেন অস্থায়ী ঝাড়ুদার বকুল মিয়া। টেবিলের ওপর রয়েছে একাধিক মৌজার আরএস ও এসএ খতিয়ান বই। নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলো সেবা গ্রহীতাদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি।এ সময় অফিসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের রেকর্ড রুম ও ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কক্ষ খুলে বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গত সোমবার সরেজমিনে গেলে এসব চিত্র উঠে আসে।
অভিযোগ আছে, সিংধা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সমস্ত নামজারি ও মিস কেসসহ বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন ঝাড়ুদার বকুল মিয়া। ভূমি মালিকদের সঙ্গে আর্থিক চুক্তিতে এসব কাজ করে দেন তিনি। আর্থিক সুবিধার ভাগ অফিসের অন্য কর্মচারীরাও নেন। একজন অস্থায়ী ঝাড়ুদারের কাছে অফিসের এমন দায়িত্ব দেওয়ায় ভূমি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথি ও অফিসের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা যায়, উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে ভূমি অফিস রয়েছে। প্রত্যেক অফিসে রয়েছে একজন করে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও একাধিক কর্মচারী। প্রায় এক যুগ আগে উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে প্রত্যেক ভূমি অফিসে একজন করে ঝাড়ুদার অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রত্যেক ঝাড়ুদারকে উপজেলা প্রশাসন থেকে মাসিক তিন হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়।
নিয়োগকালীন শর্তে উল্লেখ করা হয়, এসব ঝাড়ুদার শুধু অফিস শুরু হওয়ার আগে এবং শেষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করবেন। অথচ ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা এসব ঝাড়ুদারকে অফিস চলাকালীন সময়েও অফিসে বিভিন্ন কাজে লাগাতে শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে ঝাড়ুদাররা অফিসের স্টাফ হিসেবে ভূমি মালিকদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নিতে শুরু করেন।
আরও জানা যায়, অফিসের কোনো কাগজপত্রের ফটোকপি ভূমি মালিককে দিতে তারা ১০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিমাণে টাকা নেন। এমনকি অফিসের কর্মকর্তারাও এসব ঝাড়ুদারদের দিয়ে ঘুষের টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
সম্প্রতি সিংধা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কক্ষ, রেকর্ডরুমসহ অন্যান্য কক্ষ খুলে বকুল মিয়া কাজ করছেন।
এ সময় তাকে অফিসের চেয়ার বসে নথিপত্র ঘাটাঘাটির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, শুরু থেকেই তিনি এভাবেই কাজ করে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘অফিসের সবাই আমাকে কাজ করতে বলেন। তাই করি।’ তবে ঘুষ লেনদেনের বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।
সিংধা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা উজ্জল দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সোমবার পারিবারিক সমস্যার কারণে অফিসে যাননি তিনি। তবে, একমাত্র ঝাড়ুদার ছাড়া অন্য স্টাফরা কোথায় ছিল এবং ঝাড়ুদার বকুল প্রায়ই একা অফিস করে, এই দুটি প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।
এদিকে বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খবিরুল আহসান বলেন, ‘ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’