ঢাবি ছাত্রদল নেতাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এসআই’এর বিরুদ্ধে

রংপুর প্রতিনিধি
২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৫২
শেয়ার :
ঢাবি ছাত্রদল নেতাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এসআই’এর বিরুদ্ধে

রংপুরের পীরগাছায় ঢাবি ছাত্রদল নেতা শেখ শোভনকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে পীরগাছা থানার এসআই সফিকুল ইসলাম আকন্দের বিরুদ্ধে।

গতকাল সোমবার রাত ৯টায় উপজেলার ইটাকুমারি ইউনিয়নের কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় বিএনপি নেতাসহ এসআই সফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতা শেখ শোভনকে মারধরের পরে চ্যাংদোলা করে থানায় নিয়ে গিয়ে ঘণ্টাব্যাপী আটকে রেখে লাঞ্ছিত করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

লাঞ্চনার শিকার ছাত্রদল নেতা শেখ শোভন ঢাবি ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী। তিনি উপজেলার ইটাকুমারি ইউনিয়নের পূর্ব হাসনা গ্রামের মৃত নূরুল ইসলাম শেখের পুত্র।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ইটকুমারি ইউনিয়নের আমতলি বাজার এলাকায় গত ১৮ আগস্ট একটি শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী গাছ কাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ কর্মী ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন প্রতিবাদমূলক ভিডিও করেন। সেখানে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ কর্মী লুৎফর রহমানের যোগসাজশে বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান মাহবুব ও মোশারফ হোসেনসহ অন্যান্যরা শামীমের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। আহত অবস্থায় পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে শামীম বাদী হয়ে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা রেকর্ড হওয়ার পরেও আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও কাউকেই গ্রেপ্তার করেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সফিকুল ইসলাম আকন্দ ।

এদিকে আসামিরা কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসেই পরিবেশকর্মী ও ছাত্রদল নেতা শামীমের নামে উল্টো চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে কাউন্টার মামলা দায়ের করলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৯টায় বিএনপির পীরগাছা উপজেলা সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার অনুসারি পীরগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কালাম, নুরুজ্জামান মেম্বার শশীসহ অন্যান্যরা কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক শামীমের উপরে অতর্কিত হামলা চালান। তৎক্ষনাৎ এসআই শফিকুলের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবি ও ঢাবি ছাত্রদলনেতা শেখ শোভন আইনজীবী পরিচয় দিয়ে ছাত্রদল নেতা শামীমকে গ্রেপ্তারের কারণ জিজ্ঞেস করলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে টেনেহিচড়ে চ্যাংদোলা করে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে তাৎক্ষণিক শতাধিক এলাকাবাসী পীরগাছা থানায় উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ জানালে ঢাবি ছাত্রদল নেতা শেখ শোভনকে রাতেই পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ঢাবি ছাত্রদল নেতা শেখ শোভন বলেন, ‘পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিলনের অফিস রক্ষার অজুহাতে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার বিজয় মিছিলে গুলি চালিয়ে উল্টো ছাত্রজনতার নামে মামলা দিয়েছিলেন পীরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। আমি সেই সময় প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার পর থেকেই আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন বিএনপি নেতা রাঙ্গা। গতকাল রাঙ্গা ও ওসি রোমেল বড়ুয়ার যোগসাজশে এসআই সফিকের নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে আমাকে মারধর করে থানায় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়েছে ও আমার রাজনৈতিক সহকর্মী শামীমকে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে ন্যায্য বিচার চাই।’

অভিযুক্ত এসআই সফিকুল ইসলাম আকন্দ বিএনপি নেতার নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতা শামীমকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া ও ঢাবি ছাত্রদল নেতাকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, চাঁদাবাজির মামলায় ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তারের সময় যৌথবাহিনীর সঙ্গে অ্যাডভোকেট শেখ শোভন উত্তেজিত হয়ে তর্কে জড়ালে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তার ভাই এসে তাকে থানা থেকে নিয়ে যান। ওখানে কাউকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

এক মামলায় আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গ্রেপ্তার করা হয়নি, অপর মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে তড়িঘড়ি প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওই মামলায় আসামিরা প্রত্যেকে জামিনে থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’

এ বিষয়ে কথা বলতে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রোমেল বড়ুয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি। পরে এ বিষয়ে কথা বলব।’