কালীগঞ্জে খাদ্যবান্ধবের চাল বিতরণ হচ্ছে ডিলারের বাড়িতে
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল ডিলারের বাড়ি থেকে বিতরণ করা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সুফলভোগীরা।
কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা ডিলার নিয়োগ বাছাই কমিটির উদাসিনতায় বাড়িকে গুদাম হিসেবে দেখানো আবেদনকারীকে টাকার বিনিময়ে চুড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যার সত্যতা মিলেছে উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের বলাইরহাট পয়েন্টে।
এ পয়েন্টের জন্য জাকির হোসেন নামে একজন রড-সিমেন্ট বিক্রেতাকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। স্থানীয় বলাইরহাট পয়েন্টে তার গুদাম না থাকায় তিনি নিজ বাড়ি থেকে বিতরন করছেন খাদ্যবান্ধবের চাল।
গতকাল সোমবার দুপুরে বলাইরহাট পয়েন্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিজ বাসস্থানের একটি টিনসেট ঘরের মেঝেতে ত্রিপালের ওপর রাখা হয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সরকারি চাল। ইদুর চালের বস্তা কেটে ফেলায় অনেক বস্তা থেকে পড়ে যাচ্ছে চাল। বাড়ির সেই ঘর থেকে কার্ডধারীদের মাঝে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি মাসের পূর্বে ডিলারকে বাতিল করে নতুনভাবে জাকির হোসেনকে নিয়োগ দেয় খাদ্য বিভাগ। সোমবার ছিল এ ডিলারের চাল বিক্রির প্রথম দিন। উদ্বোধন করা হয় তার বাড়ি থেকে, যা বিতরণ করার কথা ছিল বাজারের মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে।
চাল নিতে আসা সুফলভোগী প্রফুল্য বর্মন বলেন, ‘আগে বলাইরহাট বাজার থেকে চাল বিক্রি করতেন আগের ডিলার। নতুনভাবে নিয়োগ পাওয়া জাকির হোসেন নিজ বাড়ি থেকে বিক্রি করছেন। তাই কিনতে আসলাম। মূল সড়ক থেকে তার বাড়ি যাবার রাস্তাটি কাচা তাই চালের বস্তা পরিবহনে গাড়ি মিলে না। বহন করাও কিছুটা কষ্টের। তবুও কম দামের চাল তাই আসতেই হবে।’
চাল বিক্রি পয়েন্টে আসা গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য শ্যামলী রানী বলেন, ‘এ পয়েন্টে নতুন ডিলার আমাদেরকে ডেকেছেন উদ্বোধনের জন্য। এসে দেখি তার পয়েন্টটা নিজ বাড়িতে নিয়েছেন। এটা ঠিক না। সুফলভোগীদের সুবিধার্থে পয়েন্ট হওয়া দরকার ছিল বাজারে।’ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা খাদ্য বিভাগকে অবগত করবেন বলেও আশ্বাস্থ করেন তিনি।
ডিলার জাকির হোসেন বলেন, ‘আগে কখনই খাদ্য বিভাগের ডিলার বা ব্যবসা করিনি। এবারই প্রথম খাদ্য বিভাগে লাইসেন্স করে আবেদন করেছি এবং নিয়োগ পেয়েছি। আমার পয়েন্টে ৫২৬টি কার্ডের বিপরীতে ৫২৬ বস্তা (প্রতি বস্তা ৩০ কেজি) চাল রয়েছে। বাড়ির এ ঘরটি গুদাম। যা উপজেলা বাছাই কমিটি দেখে গিয়ে আমাকে অনুমোদন করেছে। যদি বাড়িতে নেওয়া অপরাধ হয়, তবে বাজারেও গুদাম আছে, সেখানে নেওয়া হবে।’
কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল হক বলেন, ‘বাড়ি থেকে খাদ্যবান্ধবের চাল বিক্রি বা সংরক্ষণ করার কোনো নিয়ম নেই। কেউ করে থাকলে তা তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বলাইরহাট পয়েন্টের ডিলার না বুঝে নিজ বাড়িতে নিয়েছেন। আমরা তাকে সড়িয়ে নিতে বলেছি।’
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘জনবান্ধব স্থানের গুদাম ছাড়া বাড়িতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল সংরক্ষণ বা বিতরনের কোনো নিয়ম নেই। কেউ করে থাকলে তা তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে স্বল্প মূল্যে চাল বিতরণ করতে সরকারের খাদ্য মন্ত্রনালয় খাদ্যবান্ধব কর্মসুচি চালু করে। প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন ১৫ টাকা কেজি দরে। এজন্য প্রথমে সুফলভোগীর তালিকা প্রণয়ন করে তাদেরকে একটি করে কার্ড দেওয়া হয়। কার্ডের বিপরীতে প্রতি মাসে ৩০ কেজি হারে চাল কিনতে পাচ্ছেন কার্ডধারীরা। খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির জন্য ৩০ কেজি ওজনের বস্তাও করা হয়েছে। যাতে ডিলাররা ওজন কম দিতে না পারেন। প্রতিটি কার্ডধারীর জন্য ৩০ কেজির একটি বস্তা থাকে।
চাল বিতরণের জন্য সরকার প্রতিটি ইউনিয়নে নুন্যতম ৩ জন করে ডিলার নিয়োগ করে। ডিলারগণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন করেন। পরে উপজেলা কমিটি তা যাচাই বাছাই করে ডিলার নিয়োগ করে থাকেন। ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন শর্ত হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য রাখা যায় এমন পরিবেশ বান্ধব গুদাম এবং তা অবশ্যই স্থানীয় বাজার বা জনবান্ধব স্থানে হতে হবে।
ডিলার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কার্ডধারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে জনবান্ধব স্থানে ডিলার পয়েন্ট তথা গুদাম থাকতে হবে। গুদাম ঘর অবশ্যই মেঝেসহ পাকা হতে হবে। যাতে খাদ্যদ্রব্য নষ্ট না হয় এবং পোকামাকড়ের উপদ্রুত না থাকে। ডিলার নিয়োগের আগে যাচাই বাছাই কমিটি সরেজমিনে এসব গুদাম তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করে থাকেন।