কাবা শরীফের আদলে কবর নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার এক সময় ইমাম মাহাদী দাবিকারী নুরাল পাগলার মৃত্যুর পর তার কবর ভিন্নরীতিতে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ধর্মীয় সংবেদনশীলতা তৈরি হয়েছে। কবরটিকে মক্কা শরীফের আদলে নির্মাণ, কালো রঙ করা, স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক উঁচু করা এবং কবরের গায়ে ‘ইমাম মাহাদী (আ.)’ লেখা। গোয়ালন্দে বিতর্কিত নুরাল পাগলার এ কবর নিয়ে জেলাজুড়ে আলেম সমাজের মধ্যে উত্তেজনা ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সদস্যরা। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুল ইসলাম, থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম, গোয়ালন্দ ইমাম কমিটির সদস্যবৃন্দ, ১৬ সদস্য বিশিষ্ট তৌহিদী জনতা প্রতিনিধি দল এবং ১০ সদস্য বিশিষ্ট নুরাল পাগলার ভক্ত-সমর্থক ও পরিবারবর্গ নিয়ে বৈঠক করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট নুরাল পাগলার মৃত্যু পর তার পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে তার নিজ বাড়ির সামনের অংশে দুইতলা সমান (প্রায় ১২ ফুট উঁচু) একটি কাঠামোর ভেতরে কবরস্থ করা হয়। পরে কবরটিকে কাবা শরীফের আদলে রং করা হয় এবং ‘হযরত ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা ব্যানার টাঙানো হয়। এতে করে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
এ প্রেক্ষিতে গোয়ালন্দ উপজেলার ইমাম পরিষদ ও তৌহিদী জনতা গত ২৬ আগস্ট বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় তৌহিদী জনতা ও ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো, কবর থেকে কাবা শরীফের আদলে করা রং পরিবর্তন, ‘ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ এবং কবরের উচ্চতা কমিয়ে স্বাভাবিক করা।
নুরাল পাগলার ভক্ত ও পরিবারবর্গ প্রথম দুটি দাবি মেনে নিলেও কবরের উচ্চতা স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনার জন্য ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় চান।
সভা শেষে তৌহিদী জনতা ও ইমাম পরিষদ তাদের ঘোষিত গত ২৬ আগস্টের বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টির স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক মীর মাহফুজ সুজন বলেন, ‘রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ এলাকায় কোনো এক ভন্ড নুরা পাগলার কবর, কাবা শরীফের ( বাইতুল্লাহ) আকৃতিতে বানিয়ে তার ভেতরে তাকে কবরস্থ করা হয়েছে, যা ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করার সামিল। এতে কাবা শরীফের অবমাননা ও ইসলাম ধর্মকে বিকৃতি করা হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভন্ড নুরাল পাগলা কোনো এক সময় নিজেকে কোন খোদা দাবি করতো। আবার কোনো এক সময় নিজেকে ইমাম মাহাদী বলে দাবি করেছে। বিভিন্ন সময় শিরীকি কাজ হতো তার দরবারে। সে মরলেও এখনও তার দরবারে এগুলো হচ্ছে। এরা মূলত খৃষ্টানদের এজেন্ট, মুসলমানদের লোভ দেখিয়ে খৃষ্টান বানায়। এরা মহান আল্লাহ্ ও নবী মোহাম্মদ (সা.) এবং ইসলাম ধর্ম ও ধর্মপ্রান মুসলিমদের চরম শত্রু। গোয়ালন্দ তথা রাজবাড়ীর প্রশাসনকে বলব অতি দ্রুত এই ব্যাপারে আপনারা পদক্ষেপ নিন , তানাহলে রাজবাড়ীর তাওহীদি জনতা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না ইনশাআল্লাহ্।’
রাজবাড়ী ইমাম কমিটির সভাপতি হাফেজ মাওলানা ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘কবর থেকে কাবা শরীফের আদলে করা রং পরিবর্তন, ‘ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ এবং কবরের উচ্চতা কমিয়ে স্বাভাবিক করা। এ দাবিগুলো মেনে নিতে হবে। তা না হলে রাজবাড়ীর শান্তপ্রিয় মুসলমান ফুসে উঠবে।’
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে শান্তপুর্ণ সমাধানের চেষ্টা চলছে। আমরা উভয়পক্ষে শান্ত থাকার অনুরোধ করেছি।’