বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ১ চুক্তি ৪ সমঝোতা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
২৫ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের  ১ চুক্তি ৪ সমঝোতা

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি, চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি কর্মসূচি (প্রোগ্রাম) সই হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এই চুক্তি সই হয়। এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন তৌহিদ হোসেন ও পাকিস্তানের নেতৃত্ব দেন ইসহাক দার।

চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই : স্বাক্ষর করা চুক্তি হচ্ছে উভয় দেশের সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি সই। চারটি সমঝোতা স্মারক হলো- দুই দেশের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা। উভয় দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা। দুই দেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার (বাসস ও এপিপিসি) মধ্যে সহযোগিতা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সঙ্গে পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদের (আইএসএসআই) সহযোগিতা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সংস্কৃতিবিনিময় কর্মসূচি (সিইপি) সই হয়েছে।

অমীমাংসিত ইস্যু সমাধান দাবি ইসহাকের, একমত নন তৌহিদ : এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দাবি করেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর ইস্যুটি দুবার হয়েছে। একবার ১৯৭৪ সালে, আবার ২০০০-এর শুরুর দিকে, যখন জেনারেল (পারভেজ) মোশাররফ এখানে এসেছিলেন। তিনি গোটা পাকিস্তান জাতির পক্ষ থেকে গোটা বাংলাদেশ জাতির উদ্দেশে কথাটা বলেছিলেন।

তবে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত না হওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি অবশ্যই একমত না। একমত হলে তো সমস্যাটা সমাধান হয়ে যেত তাদের মতো করে, তাই না? আমি তো বললাম আপনাকে যে, আমরা আমাদের অবস্থানটা বলেছি, উনারা উনাদের অবস্থানটা বলেছেন।

২০০২ সালে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ বাংলাদেশ সফরে এসে ওই ভূমিকার জন্য সাধারণভাবে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেছিলেন কেবল। গত এপ্রিলে ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকেও অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও বিষয়টি তোলার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

তারপরও সোনারগাঁও হোটেলে বৈঠকের পরপরই পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পাশে রেখে পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের দাবি করেন, অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান আগেই হয়ে গেছে। দুদেশের সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথাও তিনি বলেন।

ইসহাক দার বলেন, অমীমাংসিত ইস্যুগুলো নিয়ে আপনার প্রশ্ন দেখুন, প্রিয় ভাই, ১৯৭৪ সালে ইস্যুটি লিখিতভাবে সমাধান হয়েছে। এই ডকুমেন্টটি ঐতিহাসিক এবং দুই দেশের কাছেই আছে। আর তারপর, যখন জেনারেল মোশাররফ এখানে এসেছিলেন; খুব খোলামেলা এবং অকপটে তিনি এই ইস্যুটি তুলে ধরেছিলেন। এবং আমি মনে করি পরিবারের মধ্যে, দুই ভাইয়ের মধ্যে কোনো কিছুর একবার সমাধান হলে, সেটা হয়ে গেছে।

পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, ৫৪ বছরের সমস্যা একদিনের সভায় সমাধান হয়ে যাবে, এটা আশা করা যায় না। তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয় প্রত্যাশা করেন না যে ৫৪ বছরের সমস্যা, আজকের একদিনের মিটিংয়ে, যে মিটিংটা ১২-১৩ বছর পর হলো এবং তাও কিন্তু পূর্ববর্তী হিনা রব্বানী খারের মিটিং কিছু একটা দাওয়াত দেওয়ার জন্য দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না। কাজেই এখানে বসে এক ঘণ্টায় আমরা এটা সমাধান করে ফেলতে পারব, এটা আপনারা নিশ্চয় আশা করবেন না। কেউ-ই আশা করবে না। আমরা পরস্পরের অবস্থানটা তুলে ধরেছি। আমি আপনাদের এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমরা পরস্পরের অবস্থান তুলে ধরেছি।’

অমীমাংসিত তিন বিষয় সমাধানে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করার বিষয়ে ‘একমত’ হওয়ার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা তিনটি বিষয়ে কিন্তু নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছি। দুই পক্ষই একটি বিষয় আমরা ঠিক করেছি যে, এই জিনিসগুলোকে আমাদের সমাধান করতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে যাতে খুব স্মুতলি এগোতে পারে এ জন্য এদের পেছনে ফেলতে হবে। দুই পক্ষই এটুকু এগ্রি করেছি যে, আমরা এ নিয়ে কথা বলব এবং চেষ্টা করব এই ইস্যুগুলো যেন আগামীতে বা কোনো এক পর্যায়ে, এক দিনে হয়ে যাবে না, এটা আমরা এটাও স্বীকার করেছি, ঝট করে আমরা একদিনে বসে এটা সমাধান করতে পারব না, ৫৪ বছরের ইস্যু।

দুদিনের সফরে গত শনিবার ঢাকায় আসেন ইসহাক দার। গতকাল দুপুর ২টার দিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম।

ইসহাক দার তার ঢাকা সফরের প্রথম দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তিনি রাজনৈতিক পরিসরসহ নানা ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বার্থের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে তিনি পাকিস্তানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

এর আগে সকালে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠক করেন।