পুতিনকে আরও সময় দিলেন ট্রাম্প!

ইউক্রেন নিয়ে শান্তিচুক্তি না হলে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দিল যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
পুতিনকে আরও সময় দিলেন ট্রাম্প!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে নতুন করে ‘কয়েক সপ্তাহ’ সময় দিতে চান। এর মাধ্যমে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে পুতিনকে তার ইউক্রেনীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসার আহ্বান জানানোর পর মস্কোর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পদক্ষেপের সময়সীমা আবার বাড়ালেন। তবে তিনি আভাস দিয়েছেন, পুতিন যদি ইউক্রেন নিয়ে শান্তিচুক্তিতে রাজি না হন, তা হলে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়া বিকল্প থাকবে না। গতকাল সিএনএন এ খবর দেয়।

সিএনএনের সাংবাদিক অ্যালাইনা ট্রিন যখন ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, পুতিন যদি ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় না বসেন, তা হলে কি কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা আছে? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা দেখব। আমি দেখব কার দোষ।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা দেখব তাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয় কিনা, তা দেখাটা আগ্রহের বিষয় হবে। যদি না হয়, তা হলে কেন হলো না, তা বোঝার চেষ্টা করব। জানব কার দোষ। দুই সপ্তাহের মধ্যেই জানব আমি কী করব।’ পুতিনের যুদ্ধ শেষ করার সদিচ্ছা বোঝার জন্য তিনি আগেও এ ধরনের সময়সীমা বারবার দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল, তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর আগে শুক্রবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছিলেন যে দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই। গত সপ্তাহে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর এবং এই সপ্তাহের শুরুতে হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যার পরে তিনি নিজে একটি ত্রিদেশীয় বৈঠকে যোগ দিতে পারেন। তবে গতকাল রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, পুতিন ও জেলেনস্কির বৈঠক হলেও সেখানে ট্রাম্প সম্ভবত সরাসরি উপস্থিত থাকবেন না।

এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বৈঠককে ‘খুবই ভালো’ বলে বর্ণনা করেছেন পুতিন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করতে চায়। রুশ ও মার্কিন সংস্থাগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে এবং তিনি মস্কো-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ‘পূর্ণাঙ্গ পুনরুদ্ধার’ প্রত্যাশা করছেন।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে রুশ বাহিনী। এই যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। তবে পুতিনের দাবি, ইউক্রেনের মাটি ব্যবহার করে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকি হয়ে উঠছিল, এই অভিযোগে ওই বিশেষ সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন তিনি।

ইউক্রেনে রাশিয়া পুরোদমে হামলা শুরুর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয় মস্কো। কিন্তু এখনও এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি মস্কো। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে পুতিন ক্রিমিয়ার স্বীকৃতি, দনবাস অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার এবং খেরসন ও জাপোরোঝিয়াসহ দখলকৃত ভূখণ্ড রাশিয়ার করে নিতে চান। ট্রাম্প এসব প্রস্তাব মেনে নিতে আহ্বান করলেও জেলেনস্কি এখনও সম্মত হননি।

ইতিহাসের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখনও ইউক্রেনকে তাড়া করছে

মিউনিখ চুক্তি, ১৯৩৮

মিউনিখ চুক্তি, যা ইউরোপে যুদ্ধ এড়ানোর জন্য চেকস্লোভাকিয়ার সুদেতেনল্যান্ড অঞ্চল হিটলারের জার্মানির হাতে তুলে দিয়েছিল, তা আপসকামী নীতির রূপ হয়ে উঠেছে। সমালোচকরা ট্রাম্পের পুতিনের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার আগ্রহ এবং ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারাতে রাজি হওয়ার পরামর্শকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলেইনের ভুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো শান্তি চুক্তিতে রাশিয়াকে ইউক্রেনের বাকি দোনেৎস্ক অঞ্চল দখল করতে দেওয়া হলে পুতিনের বাহিনী স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামতোরস্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবে, যা কিয়েভের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ইয়াল্টা সম্মেলন, ১৯৪৫

আরেকটি ঐতিহাসিক অধ্যায় হলো ১৯৪৫ সালের ইয়াল্টা সম্মেলন। এই সম্মেলনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের কাঠামো নির্ধারণ করেছিল। পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে একে এমন বৈঠক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা তাদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দেয়। এ ছাড়া এই সম্মেলনের ঘোষণা লক্ষ লক্ষ মানুষকে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে জীবন কাটাতে বাধ্য করে।

কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের একটি বড় চুক্তির প্রচেষ্টা কিয়েভকে বিক্রি করে দেওয়ার ঝুঁঁকি বহন করে। বিশেষ করে যদি ইউক্রেনীয়দের বাদ দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম, ১৯৯৪

ইউরোপীয় মিত্ররা যখন ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা খোঁজে, তখন ১৯৯৪ সালের বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডামের স্মৃতিও বড় হয়ে ওঠে। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন তাদের ভূখণ্ডে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রগুলো পরিত্যাগ করতে সম্মত হয়েছিল। রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া এবং ২০২২ সালের পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে পারেনি। ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো বলেছিলেন, এই চুক্তিতে উল্লেখিত নিরাপত্তা নিশ্চয়তাগুলো ছিল দন্তহীন। তার ভাষায়, ‘বাধ্যবাধকতা ছাড়া অন্য কোনো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অগ্রহণযোগ্য।’