চড় দেওয়ায় শ্বশুর ‘হত্যা’, লাশ মিলল খালে

বরিশাল ব্যুরো
২৩ আগস্ট ২০২৫, ২০:১৭
শেয়ার :
চড় দেওয়ায় শ্বশুর ‘হত্যা’, লাশ মিলল খালে

বরিশালে চড় দেওয়ায় শ্বশুরকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে কৃষ্ণ বাড়ৈ (২৫) নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কচুরিপানা ভর্তি খাল থেকে নিখোঁজ শ্বশুর অখিল হালদারের (৫০) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার রাতে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা আহুতি বাটরা গ্রামের একটি খাল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত বুধবার থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

নিহত অখিল হালদার উপজেলার রামানন্দের আক গ্রামের মণিমোহন হালদারের ছেলে। তিনি পেশায় গরুর দুধ বিক্রেতা। তার মেয়ের জামাই কৃষ্ণ বাড়ৈ উপজেলার বাকাই গ্রামের কানাই বাড়ৈর ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অলিউল ইসলাম জানান, গত বুধবার শ্বশুর অখিল হালদারের সঙ্গে ভ্যান কিনতে গিয়েছিলেন জামাই কৃষ্ণ বাড়ৈ। কিন্তু ভ্যান বিক্রেতা ফোন না ধরায় সেটা কেনা হয়নি। সেদিন রাতে অখিল হালদার বাড়ি না ফেরায় পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। নিখোঁজের বিষয়টি কৃষ্ণ বাড়ৈকে জানিয়ে তাকে শ্বশুরবাড়িতে আসতে বললেও তিনি আসেননি। পরদিন তিনি শ্বশুরবাড়িতে গেলে তার অসংলগ্ন কথাবার্তায় সবার সন্দেহ হয়। পরে অখিলের স্ত্রী বিউটি হালদার থানায় জিডি করলে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্ত শুরু করে।

এ সময় নিখোঁজের আগে অখিল ও জামাতা কৃষ্ণ বাড়ৈর ফোনের লোকেশন একই স্থানে দেখতে পায় পুলিশ। এ ছাড়া মাদারীপুরের ডাসার থানার পাথুরিয়ারপাড় এলাকার একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে কৃষ্ণ বাড়ৈকে শ্বশুরের দুধের কলসসহ ভ্যান চালিয়ে মাদারীপুরের দিকে যেতে দেখা যায়।

পরে কৃষ্ণ বাড়ৈকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি শ্বশুরকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, বাজার থেকে ফেরার পথে শ্বশুরের সঙ্গে তার তর্ক হয়। এ সময় শ্বশুর তাকে চড় দেয়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে শ্বশুরকেও চড় দেন। আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তার বুকের ওপর উঠে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে শ্বশুরের মরদেহ আহুতি বাটরা গ্রামের কচুরিপানা ভরা খালে ফেলে দেন। আর শ্বশুরের দুধের কলস ও ভ্যান মাদারীপুরে নিয়ে বিক্রি করে দেন।

কৃষ্ণ বাড়ৈর দেখানো স্থান থেকে আজ অখিল হালদারের অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

ওসি অলিউল ইসলাম আরও জানান, এই ঘটনায় অখিলের স্ত্রী বিউটি হালদার মামলা করেছেন। ওই মামালায় জামাতা কৃষ্ণ বাড়ৈকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে কৃষ্ণ বাড়ৈর সঙ্গে সামাজিকভাবে বিউটি হালদারের বিয়ে দিয়েছিল অখিল হালদার। চার ভাইবোনের মধ্যে বিউটি সবার বড়। বিয়ের পরে জানতে পারে কৃষ্ণ বাড়ৈ একজন মাদকাসক্ত। বিদেশে যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে শ্বশুরের কাছ থেকে মোট ৪০ হাজার টাকা যৌতুক নেয় কৃষ্ণ বাড়ৈ। পরে একটি ভ্যান কেনার জন্য টাকা দাবি করলে শ্বশুর তা দিকে অস্বীকৃতি জানালে কৃষ্ণ বাড়ৈ ক্ষিপ্ত হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।কে