কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় বিদ্যুৎহীন ভৈরব সেতু, বাড়ছে ছিনতাই
যশোরের অভয়নগরে ঢাকার সঙ্গে সংযোগ ভৈরব সেতুটি নির্মিত হয়েছে শতকোটি টাকায়। দীর্ঘ ১৬ মাস বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন থাকায় বেড়েছে চুরি-ছিনতাইসহ ছোটবড় দুর্ঘটনা। রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির না থাকায় চুরি হচ্ছে মালামাল। জনবল সংকট থাকায় রক্ষণাবেক্ষণসহ তদারকি করতে পারছেনা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় (এলজিইডি)।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, নওয়াপাড়া জোনাল অফিস বলছেন, ‘ভৈরব সেতুর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ২ লাখ ৮২ হাজার ৬৯৪ টাকা। অপরদিকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ হলেই সেতুর দায়িত্ব নিতে পারে নওয়াপাড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।’
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভৈরব সেতুর সবগুলো সড়ক বাতি বন্ধ রয়েছে। অসংখ্য বাতি ও সেতুর গুরুত্বপূর্ণ স্থানের যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নেই কোনো নিরাপত্তা কর্মী।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলার ভাঙ্গাগেট মশরহাটী গ্রামের সঙ্গে শ্রীধরপুর ইউনিয়নের দেয়াপাড়া গ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভৈরব সেতু। ১৬টি পায়ার (পিলার) বিশিষ্ট ৭০২,৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সেতুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রয়েছে ৬০টি সড়ক বাতি।
শ্রীধরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ‘উপজেলার শ্রীধরপুর, বাঘুটিয়া, শুভরাড়া ও সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের সঙ্গে প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নসহ নওয়াপাড়া পৌর এলাকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই ভৈরব সেতু। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে। অভয়নগর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত যাতায়াত করা সম্ভব হয়। অথচ সেই সেতুর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন প্রায় দেড় বছর। সন্ধ্যার পর অন্ধকার পরিবেশে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘অন্ধকার পরিবেশের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অপরাধী চক্র সক্রিয়। যে কারণে চুরি-ছিনতাই বন্ধ করা যাচ্ছে না।’
ট্রাক চালক আব্দুল হক জানান, শতকোটি টাকার সেতুতে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাতে এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে বিভিন্ন সময়ে ছিনতাইয়ের শিকার হতে হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর নিরাপত্তা ও সড়ক বাতি সচল করার আহ্বান জানান তিনি।
অভয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘জনবল সংকট থাকায় ভৈরব সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি বন্ধ রয়েছে। তদারকি ও হস্তান্তরের বিষয়ে নওয়াপাড়া পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা চলছে।’
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২এর নওয়াপাড়া জোনাল শাখার ডিজিএম সঞ্জিত কুমার মন্ডল বলেন, ’ভৈরব ব্রিজের মিটারটি অভ্যন্তরীণ ত্রুটির কারণে পুড়ে যায়। সমিতির নিয়ম অনুযায়ী মিটারটি খুলে আনা হয়েছে। ১৬ মাসের ভৈরব সেতুর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ২ লাখ ৮২ হাজার ৬৯৪ টাকা।’
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নওয়াপাড়া পৌরসভার প্রশাসক পার্থ প্রতিম শীল বলেন, ‘ভৈরব সেতুর বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় (এলজিইডি) এবং নওয়াপাড়া পৌর কর্তৃপক্ষের মধ্যে কথা চলছে। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ হলেই পৌর কর্তৃপক্ষ ভৈরব সেতুর দায়িত্ব নিতে পারে।’