ছাত্রীকে বাসে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ২
কুবি প্রতিনিধি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রীকে চলন্ত বাসে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাদের অজামিনযোগ্য দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ শুক্রবার সকালে নয়টার দিকে সেন্টমার্টিন পরিবহণ নামের একটি বাসে এই ঘটনা ঘটে।
গ্রেপ্তাররা হলেন মো. হোসেন আলী (২৫) এবং মো. আলী হোসেন (২৩)। তাদের ভাষ্যমতে পলাতক তিনজন হলেন পিচ্চি রাসেল (৩২), নূর আলম এবং সৌরভ।
জানা গেছে, আজ সকাল নয়টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে কোটবাড়ি বিশ্বরোড থেকে সেন্টমার্টিন বাসে উঠেন ভুক্তভোগী ও ছাত্রী। বাসটি পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে ইউ টার্ন নেওয়ার কথা বলা থাকলেও তাকে (ভুক্তভোগী) নিয়ে বাসটি চৌদ্দগ্রামের দিকে চলে যায়। এরপর সুয়াগাজী নামক স্থানে গিয়ে ইউ টার্ন নিয়ে পুনরায় পদুয়ার বাজার আসে। তখন বাসে ছিল চালক, হেল্পারসহ আরও তিনজন। বাসে একা পেয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীর গলায় ছুরি ধরে গহনা, টাকাপয়সা নিয়ে নেয় ও ধর্ষণের চেষ্টা করে।
তখন ভুক্তভোগীর হাতে কামড় দেন অভিযুক্তরা। এরপর তার হাত-পা বেঁধে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে ভুক্তভোগী অনুরোধে ফেলে না দিয়ে শাকিল আবাসিক হোটেল নামক হোটেলে নিয়ে আসে। পদুয়ার বাজারের স্থানীয় এক ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খবর দিলে শিক্ষার্থীরা গিয়ে ভুক্তভোগীর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে এবং বাসে থাকা দুজনকে আটক করে। এ সময় জড়িত অন্য তিনজন পালিয়ে যান।
ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ আসে। শিক্ষার্থীরা বাস মালিক এবং অভিযুক্ত বাকী দুইজনকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসার জন্য দাবি জানায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানালে আজ দুপুর ১২টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দাবি না মানায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি ঠান্ডা করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আলোচনায় আসলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযুক্তদের দুইবছর কারাদণ্ড দেয়। বাকিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করবে বলে নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা সেন্টমার্টিন পরিবহনের দুটি বাস জব্দ করে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুবাইয়া খানম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এসেই আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়া বিষয়ে। শিক্ষার্থীরা শুরুতে আমার কথায় কর্ণপাত করেনি। অবশেষে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি মেনে নিয়েছে।’
আরও পড়ুন:
লরির ধাক্কায় পুলিশ সদস্য নিহত
কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন,‘গ্রেপ্তার হওয়া দুইজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। বাকী অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। আশা করি পুলিশ প্রশাসনের কোনো গাফিলতি থাকবে না।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের থেকে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি। এসে দেখি পরিস্থিতি উত্তপ্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী এসেও হিমশিম খাচ্ছে। অবশেষে একটা সুরাহা হয়েছে। অভিযুক্তদের দুইবছর কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আমি ধর্ষণের পক্ষে নই, আমি চাই এর অভিযুক্তরা শাস্তি পাক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমাদের একজন ছাত্রীর হাত-পা বেধে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে এবং বাস থেকে ফেলে দিয়ে মধ্যযুগীয় নির্যাতন করেছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দুইজন ধরা পরেছে, তারা পুলিশের কাছে আছে এবং পুলিশ প্রশাসন কথা দিয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তার করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আছেন, তিনি অপরাধীদের ২ বছরের অজামিনযোগ্য জেল দিয়েছেন এবং পুলিশ ঘোষণা দিয়েছেন তারা ১ মাসের মধ্যে চার্জশিট দিবেন যাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়।’