উপকূলবর্তী বনজীবীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে ‘সুশীলন’
সুন্দরবন উপকূলবর্তী বনজীবীদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ‘সুশীলন’ ১৯৯১ থেকে টানা কাজ করে আসছে। বনজীবীদের আশ্রয় ও ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে এই সুশীলন। আয়লা, আম্পান থেকে শুরু করে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি সবার আগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় সুশিলন। সুন্দরবন উপকূলবর্তী মানুষের জন্য দীর্ঘ দিনে ধরে কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে সুশিলনের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা নুরুজ্জামানকে উপকূলবন্ধু উপাধি দিয়েছেন বনজীবী ও স্থানীয়রা। তাই সুন্দরবন উপকূলবর্তী বনজীবীদের পক্ষ থেকে উপকূলবন্ধু মোস্তফা নুরুজ্জামানকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধি, বনজীবীসহ দরিদ্র মানুষের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সুন্দরবন সুরক্ষা ও বনায়নে অবদানের জন্য এই সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর বনশ্রী শিক্ষা নিকেতন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বনজীবীদের সংগঠন ‘সিএমসি’র নির্বাহী কমিটির সভাপতি মাহমুদা বেগম। সুশীলনের উপ-পরিচালক শাহিনা পারভিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, বনশ্রী শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল করিম, সুশীলনের উপ-নির্বাহী প্রধান মো. নাসিরুদ্দিন ফারুক, সাতক্ষীরা পিপলস ফোরামের সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ এবং বনজীবী জুলি বেগম, পঞ্চি রানী, কল্পনা রানী বিশ্বাস ও আবু ফরিদ।
অনুষ্ঠানে ইউএনও মোছা. রনী খাতুন বলেন, অভিযোজনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ প্রান্তিক মানুষদের উন্নয়নের অংশীদার করতে হবে। উপকূলবন্ধুর সকল নেতৃত্বে আমরা সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছি আমাদের মাটি, আমাদের পানি, আমাদের বনের জন্য। এই উদ্যোগ আমাদের দেখিয়েছে নারীর নেতৃত্ব, তরুণদের অংশগ্রহণ এবং কমিউনিটির ঐক্য দিয়ে কীভাবে বড় পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।
অনুষ্ঠানে সম্মাননা স্মারক গ্রহণকালে বনজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে উপকূল বন্ধু মোস্তফা নুরুজ্জামান বলেন, বনজীবীদের অধিকার নিশ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠিত আর্থ-সমাজিক উন্নয়নে কাছ করছে সুশীলন। সুশীলনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় একশো কিলোমিটার রাস্তায় বনায়ন ও এক হাজার হেক্টর চরে ম্যানগ্রোভ বনায়ন করা হয়েছে। এজন্য তিন বার জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে। বনজীবী সম্প্রদায়ের এই ভালোবাসা ও সম্মান তাঁর দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
উপকূলে দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সুন্দরবনসহ উপকূলের প্রাণ-প্রকৃতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। জেলে-বাওয়ালী-মৌয়ালসহ বনজীবীদের অনেকেই পেশা হারিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। এই বিপর্যয় থেকে রক্ষায় জনগণকে সচেতন হতে হবে। নদ-নদী, খাল ও জলাশয় দখল ও দুষণমুক্ত করতে হবে।
উল্লেখ্য, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ‘সুশীলন’ ১৯৯১ সাল থেকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। সবার পিছে ও সবার নিচে পড়ে থাকা মানুষের উন্নয়নে সুশীলনের প্রায় ২০০০ হাজার কর্মী কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে সুশীলন প্রতিবছর প্রায় ১৫০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে। গত ৩৪ বছরে সুশীলন ৬৪টি জেলায় ১৩১টি প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতায় ৩৯৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি পরিবারকে সহযোগিতা করেছে। যার মধ্যে ১০ লক্ষ পরিবারকে দুর্যোগকালীণ সহযোগিতা দিয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের পানি সমস্যা সমাধানে তিন শতাধিক খাল খনন, ৫ শতাধিক পুকুর সংস্কারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিরাপদ খাবার পানির বিপনন ব্যবস্থা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে উপকূলীয় অঞ্চলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই সকল কাজের প্রধান ভূমিকায় আছেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী প্রধান মোস্তফা নুরুজ্জামান।