উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত ভবনে মাদকের আখড়া

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
২২ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৪৫
শেয়ার :
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত ভবনে মাদকের আখড়া

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি পরিত্যক্ত ভবনে মাদকের আখড়া হিসেবে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। 

তিনতলা বিশিষ্ট এই ভবনটিতে এক সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরতরা বসবাস করলেও বর্তমানে ভবনটি পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে আছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় প্রতি রাতেই মাদক ও জুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ চলে এই ভবনটিতে।

সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত এই ভবনটি হাসপাতালের কোনো কাজে আসছে না। ফলে রাত হলেই এখানে প্রতিনিয়তই মাদক ও জুয়ার আসর বসে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন অসামাজিক যৌন কার্যকলাপ ঘটে এই ভবনের পরিত্যক্ত কক্ষে। ভবনের প্রত্যেকটি কক্ষে বিপুল পরিমানে মদের বোতল, সিগারেটের প্যাকেট, ইয়াবা ট্যাবলেটের আলামত ও দিয়াশলাইসহ মাদক ব্যবহারের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম পড়ে আছে। শুধু মাদক সরঞ্জামই নয় মেয়েদের কাপড়সহ যৌন মিলনকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র ও প্যাকেটও পাওয়া যায় সেখানে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, রাত হলেই দলবেধে হাসপাতালের এই ভবনে প্রবেশ করে মাদকসেবীরা। কখনো কখনো হাসপাতালের পেছন দিয়ে আসলেও বেশিরভাগ সময় হাসপাতালের মেইন গেইট দিয়েই তারা প্রবেশ করে। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ও প্রশাসনের ভূমিকা যেন অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ।

স্বেচ্ছাসেবী রুহুল সিদ্দিকী রুমান বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে প্রচুর মাদক সেবনের সরঞ্জাম, মদের বোতল, সিগারেটের প্যাকেট, গর্ভনিরোধক ও মেয়েদের ব্যবহৃত পোশাক পড়ে আছে। এখানে গুরুতর অপকর্ম দীর্ঘদিন ধরে চললেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানায় না। আমরা চাই হাসপাতাল যেনো নিজেই রোগীতে পরিণত না হয়।’

স্থানীয় মানবকল্যাণ সংস্থা (ইনসাফ) এর চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ পাহাড়ী বলেন, ‘হাসপাতাল ভবনে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের আড্ডাখানা এবং নারী পুরুষের শারীরিক সম্পর্কের বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে, যা কখনোই কাম্য নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এমন অপকর্মের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা আছে। তাই এর দায়ভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের যৌক্তিক কিছু দাবি মেনে জনগণের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমরা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং-এ উত্থাপন করেছি এবং আমাদের পক্ষ থেকে এই স্থানে টহল দেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে।’

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল রানা জানান, ইতিপূর্বে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওইস্থান থেকে অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে দুই জনকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছিল। এছাড়া ৩ জন মাদকসেবীকে আটক করা হয়েছিল। এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে থাকে। শহরের বিভিন্নস্থানে পুলিশের নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মতো সংরক্ষিত স্থানে মাদক কাণ্ডের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া হাসপাতালের ভেতরে মাদক সেবন করা হচ্ছে এই ধরণের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’