সব নিত্যপণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী

অনলাইন ডেস্ক
২২ আগস্ট ২০২৫, ১৩:০৫
শেয়ার :
সব নিত্যপণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী

কয়েকমাস স্থিতিশীল থাকলেও গত জুলাই থেকে ফের ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজার। যা এখন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। শাক-সবজি থেকে শুরু করে মুরগি, ডিম, চাল, মাছসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামই চড়া।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বাজারে আলু, বই কচু ও কাঁচা পেঁপে ছাড়া আর কোনো সবজি ৮০ টাকার কমে মিলছে না। এমনকি গ্রীষ্মের সবজি ঢ্যাঁড়স-পটোলও বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। এছাড়া বরবটি, বেগুন, উস্তা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গার, ধুন্দল কাঁকরোলের দাম বাজারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩২০ টাকায়। প্রতি পিস চালকুমড়া ৭০ টাকা, লাউ ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়ার ফালি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

সবজির সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিমের দামও। আগে প্রতি ডজন ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বেড়ে হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। মাত্র একমাস আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।

রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগি ৩২০-৩৪০ টাকা, সাদা কক ৩০০ টাকা, লাল কক ২৮০-৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় শাক-সবজির দাম বাড়ছে। তবে চলতি সপ্তাহে কমেছে কয়েকটির দাম। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মতলব আলী বলেন, ‘কিছু কিছু সবজির দাম কমেছে। আবার কোনোটার দাম বেড়েছে, আবার স্থিতিশীল রয়েছে কোনো কোনো শাক-সবজির দাম। গ্রামে-গঞ্জে সব জায়গায় এখন পানি। অনেক জায়গায় ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে। এতে সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে।’

এদিকে নতুন করে বেড়েছে মসুর ডাল ও আটার দাম। প্রতিকেজি খোলা আটা ৪৫ থেকে ৫০ এবং প্যাকেট আটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডাল কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত; বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। আর ভারতীয় মসুরির ডাল কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা; বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০৫ টাকায়।

ভারত থেকে আমদানির প্রভাবে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে চিত্র ভিন্ন। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। দেশি রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১২০ এবং আমদানি করা রসুনের কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারিতে দাম কমলেও মজুত কম থাকায় সরবরাহ চাপ সামলাতে খুচরায় দাম ধরে রাখতে হচ্ছে।

পাইকারি বিক্রেতা ছামাদ গাজী বলেন, ‘বাজারে চাহিদা আছে, কিন্তু জোগান নেই। চাষির ঘরে পেঁয়াজ শেষ হয়ে এসেছে, আর সীমান্ত দিয়ে যেটুকু আসছে, তা পর্যাপ্ত নয়।’

রাজধানীর মগবাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী বারেক হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘আজ প্রায় দুই মাস ধরে বাজারে সবজির দাম বেশি। মাছ-মাংসের পাশাপাশি এখন মনে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা সবজিও খেতে পারবে না।’

মাছের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকায়। আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়।

এছাড়া প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকায়, কাতল ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩০, কৈ ২০০-২২০ এবং পাবদা ও শিং বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। আর চাষের ট্যাংরা প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও মলা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।