গতি এসেছে কাজে, রয়েছে সংশয়ও
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন রেলপথ প্রকল্পে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চীনা ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে যাওয়ার পর এবার যৌথভাবে কাজ পায় ভারতীয় জিপিটি ইনফ্রাপ্রজেক্টস ও বাংলাদেশি স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। তবে এই স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্সের মালিক ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও জুলাই হত্যা মামলার আসামি সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, যিনি বর্তমানে পলাতক। মালিকানা বদলের পর প্রতিষ্ঠানটির নতুন ব্যবস্থাপনায় কাজ এগিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে যান। জুলাই হত্যা মামলার আসামি এই যুবলীগ নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন রেলপথ প্রকল্পের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই কাজে স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্সের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভারতীয় আরেকটি প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে এই প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নেয় স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। নানা ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত মনোনীত হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে চুক্তিবদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠানটি। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সুভাষ চন্দ্র পালিয়ে থাকায় প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্সের পক্ষে চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও নির্বাহী পরিচালক হিসাবে মাহমুদুল হাসান ভারতীয় প্রতিষ্ঠান জিপিটি ইনফ্রাপ্রজেক্টস লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পের কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রে কেবল স্ট্যান্ডার্ডের মালিকানায় পরিবর্তন দেখিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সুভাষ চন্দ্রের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রকল্পে মাঝপথে কাজ ফেলে পালিয়ে যায় চীনা ঠিকাদার ‘পাওয়ার কনকস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না লিমিটেড’। এরপর নতুন দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে কাজ পায় যৌথভাবে জিপিটি-স্ট্যান্ডার্ড। এর মধ্যে জিপিটি ভারতীয় ঠিকাদার আর স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স দেশি প্রতিষ্ঠান। দরপত্রের নানা প্রক্রিয়া শেষে কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পতনে প্রতিষ্ঠানটির মালিক যুবলীগ নেতা সুভাষ চন্দ্র পালিয়ে যান। এতে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ আরেক দফা অনশ্চিয়তায় পড়ে। এখন প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বদলের পর নির্মাণকাজে গতি আসতে পারে বলে ধারণা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজে আশা করি আর সমস্যা হবে না। এরই মধ্যে মালিকানা বদল হয়েছে দেশি প্রতিষ্ঠানটির। প্রকল্প নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল। আগের ঠিকাদার চলে যাওয়া, নতুন করে দরপত্র আহ্বান। কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে সব চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
জানা গেছে, প্রতিদিন এ পথে ১৬ জোড়া ট্রেন আসা-যাওয়া করে। বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় আসেন ট্রেনে চেপে। সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় এটি ডাবল লাইন করতে প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পের কাজ শুরু করে এক পর্যায়ে পালিয়ে যায় চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যাওয়া ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। পরে পূর্ত প্যাকেজ ডব্লিউ-৩ এর আওতায় নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। অসমাপ্ত কাজের অবশিষ্টাংশ এবং কিছু নতুন কাজ যুক্ত করে প্যাকেজটি ঘোষণা করা হয়। এ জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর।
দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে (সিসিজিপি) এটি অনুমোদন দেয় বর্তমান সরকার। দরপত্রে অংশ নিয়েছিল পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। মীর আখতার, তমা কনস্ট্রাকশন, আরভিএনএল-সিআইএল যৌথভাবে, এমআইএল-সিআরইসি যৌথভাবে এবং জিপিটি-স্ট্যান্ডার্ড যৌথভাবে। সর্বনিম্ন দরদাতা জিপিটি-স্ট্যান্ডার্ডের চুক্তিমূল্য দাঁড়ায় ৩১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটি নানা কারণে ঝুলছে। প্রকল্পের সর্বশেষ অনুমোদিত মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু বাস্তবে প্রকল্পটি কবে শেষ হবে, তা বলা যাচ্ছে না।