একাত্তরে কৃতকর্মের ক্ষমা ও বাণিজ্য প্রাধান্য পাবে

পাক উপপ্রধানমন্ত্রী আসছেন কাল

আরিফুজ্জামান মামুন
২২ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
একাত্তরে কৃতকর্মের ক্ষমা ও বাণিজ্য প্রাধান্য পাবে

দীর্ঘ ১৫ বছরের শিথিলতা কাটিয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন গতি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নকে পাকিস্তান সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ঢাকায় এসেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে গত দেড় দশক ধরে অকার্যকর থাকা বাংলাদেশ-পাকিস্তান জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়াতে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন গঠন করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আগামীকাল শনিবার ঢাকা আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।

কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ইসহাক দারের ঢাকা সফরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সাংস্কৃতিক বিনিময়, জনগণের পারস্পরিক সংযোগ, সম্পত্তি বণ্টন, সামরিক সহযোগিতা এবং ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত ইস্যু আলোচনার মূল এজেন্ডায় থাকবে। ২৪ আগস্ট তার সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্তরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে।

বৈঠকে একাধিক সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন। ইতোমধ্যে দুই দেশের কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা বিলোপ চুক্তি সইয়ের বিষয়েও অগ্রগতি হয়েছে। চুক্তির খসড়া বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে এবং রাজনৈতিক অনুমোদন পেলে ইসহাক দারের সফরেই চুক্তিটি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তান ১২৬ দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা ফি বাতিল করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

২০১৮ সাল থেকে বন্ধ থাকা ঢাকা-করাচি-লাহোর সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইট পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া কার্গো ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে, যা দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। ইতোমধ্যে সরাসরি কার্গো শিপিং চালু হয়েছে।

২০০৭ সালে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাণিজ্য বাড়িয়ে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র একবারই সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হয়েছে। বর্তমানে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮০০-৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সম্ভাবনা থাকলেও বিভিন্ন কারণে এ অঙ্ক এখনও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান থেকে আলু, পেঁয়াজ, ডিম, চাল, আটা ও চিনি আমদানির জন্য রাষ্ট্রীয় চুক্তির প্রস্তাব আসতে পারে।

বৈঠকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা এবং আর্থিক পাওনা মেটানোর দাবি উত্থাপন হতে পারে। পাশাপাশি আটকে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের ইস্যু, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়গুলোও আলোচনায় থাকবে।

দুই দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়াতে দ্বিপক্ষীয় বৃত্তি ও একাডেমিক বিনিময়ের ওপর জোর দেওয়া হবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সামাজিক গবেষণায় যৌথ প্রকল্প নেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে।

পাকিস্তানের করাচি শহরেই প্রায় ২৫ লাখ প্রবাসী বাঙালি বাস করেন, যাদের বেশির ভাগের কাছে পাকিস্তানি পাসপোর্ট রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এদের মধ্যে সামান্য অংশও যদি প্রতি বছর বাংলাদেশ সফর করেন, তবে দুই দেশের সামাজিক সংযোগ দ্রুত উন্নত হবে। তবে দীর্ঘদিন ভিসা সীমাবদ্ধতার কারণে এ সংযোগ ব্যাহত হয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক কারণে দুই দেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে তলানিতে পৌঁছায়। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের পদক্ষেপ শুরু হয়। প্রায় ১৫ বছর পর গত ১৭ এপ্রিল ঢাকা-ইসলামাবাদ ফরেন অফিস কনসালটেশন অনুষ্ঠিত হয়।

দুই দেশই সম্প্রতি ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সার্ক কাঠামোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো ও দক্ষিণ এশিয়ায় যোগাযোগ সম্প্রসারণের বিষয়গুলোও আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।