বিএনপির বিজয় ঠেকানোর প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে: তারেক রহমান
বিএনপির বিজয় ঠেকানোর প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বৃহস্পতিবার শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের মানুষ কংসরূপী এক ফ্যাসিস্টের দুঃশাসন ও নির্যাতন দেখেছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে হাজারও শহিদের আত্মত্যাগের ফলে গণতন্ত্রকামী মানুষ কংসরূপী ফ্যাসিস্টের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। স্বৈরাচারের পতনের পর দেশে এখন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সংসদ এবং সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রাপথ কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত নয়।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে, কিন্তু আমরা লক্ষ করছি যে, এই নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মন্তব্য এবং নিত্যনতুন শর্ত জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।’
তিনি বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারে— এই ভয়ে পলাতক স্বৈরাচার বিএনপির বিজয় ঠেকানোর মতো অন্তর্ঘাতী অপরাজনীতি চালু করেছিল। তারা নির্বাচনী ব্যবস্থাকেও গত ১৬ বছর ধরে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে এবার ক্ষমতাসীন সরকার নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সহযোদ্ধা কতিপয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আচরণেও সেই পলাতক স্বৈরাচারের মতো বিএনপির বিজয় ঠেকানোর প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তারেক রহমান বলেন, যারা মনে করছেন নির্বাচন দিলে জনগণ ভোট দিয়ে বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করবে এবং এই কারণে নানা রকম অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন, তাদের জনগণের শক্তির ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখার আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির বিজয় যদি জনগণ দিয়েই থাকে, তবে সেই বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পথ রুদ্ধ করবেন না।
জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা জানি বিশ্বের অনেক দেশেই হয়তো এই পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এখনো উপযোগী নয়।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিসহ আরও দু-একটি ইস্যুতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা ভিন্নমত রয়েছে। গণতন্ত্রে এমন ভিন্নমত থাকা এর সৌন্দর্য। তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে, বাস্তবতার নিরিখে প্রতিটি ইস্যুই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরভাবে সমাধান হয়ে যাবে।
তারেক রহমান বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে যারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছেন, তারা হয়তো নিজেদের অজান্তেই গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করছেন। যদি আমরা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে একের পর এক শর্ত আরোপ করতে থাকি, তাহলে একই সঙ্গে বিতাড়িত ও পলাতক স্বৈরাচার পুনর্বাসনের পথও হয়তো সুগম হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ধর্মীয় পরিচয়কে যেন কেউ নিজেদের হীন ও দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আপনাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। অতীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থাপনা বা বাসাবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। যদি এসব ঘটনা পর্যালোচনা করা হয়, তবে দেখা যাবে দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ হামলার পেছনে কোনো ধর্মীয় কারণ ছিল না। বরং প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করলে দেখা যাবে এর নেপথ্যে ছিল অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও বিএনপির ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক সহ-সম্পাদক অপর্ণা রায় দাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য রনেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুণ রায় চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তপন চন্দ্র মজুমদার, এসএন তরুণ দে, মিল্টন বৈদ্য, পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের জয়দেব জয়, হিন্দু মহাজোটের সুশান্ত চক্রবর্তী, ঢাকা মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত দেব, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর প্রমুখ।
শুভেচ্ছা বিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।