নায়কদের রাজা একজনই
নায়করাজের কখনও মৃত্যু হয় না। কথাটার মধ্যে কোনো প্রকার মিথ্যা নেই। চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে, ততদিন বেঁচে থাকবেন রাজ্জাক। ১৯৬৪ থেকে আমৃত্যু দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। ছিলেন সামাজিক সিনেমার সর্বজনপ্রিয় অভিনেতা, ব্যক্তিগত জীবনেও রোল মডেল। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা নিয়ে রাজ্জাক পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আকাশ থেকে ঝরে পড়ে একটি নক্ষত্র। তিনি নেই, কিন্তু রয়ে গেছে চলচ্চিত্র। এসব সিনেমায় তার অভিনয় দেখে আজও আপ্লুত হয় দর্শক। পাঠকদের জন্য আজ তুলে ধরা হলো নায়করাজের শেষ জীবনের কিছু বক্তব্য।
# আমার আগে যারা নায়ক হিসেবে অভিনয় করতেন, সবাই ছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব। আনোয়ার হোসেন ভাই, খলিল ভাই, শওকত আকবর ভাই। দর্শক তাদের কলেজপড়ুয়া রোমান্টিক হিরো হিসেবে মানতে পারা না। আমি যখন এলাম, রোগা-পাতলা একটা যুবক। অনেকেই আমাকে দেখে বিরক্ত হয়ে অফিস থেকে চলে যেতে বলেছে। পরে সেই সব পরিচালকই আমাকে নিয়ে ছবি করেছেন। এটা আমার কাছে প্রাপ্তি। আমার চেহারাটা ফটোজেনিক ছিল। তবে অনেক রোগা-পাতলা ছিলাম বলে লোকে ভাবত, এই ভাঙাচোরা ছেলে দিয়ে কী হবে! যাক, আমি রোমান্টিক হিরো হয়ে পর্দায় আসতেই দর্শক লুফে নিল। এটা ছিল আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট।
# যুদ্ধের পর দেখলাম, দেশের যুবকদের মধ্যে একটা পরিবর্তন। একটা অস্থিরতা সবখানে। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, নিজের ইমেজটাকে ভেঙে নতুন করে দাঁড় করাব। ‘রংবাজ’ ছবি করলাম। সমাজের অবহেলিত এক যুবকের অস্থিরতা, হতাশা ও সমাধানের গল্প। ছবি সুপার-ডুপার হিট হলো। এর পরই ‘বেঈমান’ করলাম। সেটিও সুপারহিট। একজন হিরোকে এভাবে সময় ধরতে জানতে হয়। প্রযোজক-পরিচালকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ীই ভাববেন। কিন্তু হিরোকে ভাবতে হয়, সময় কী চাইছে।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
# আমি সব সময় চেয়েছি ইন্ডাস্ট্রি যেন শূন্যতায় না ভোগে। আমি চলে যেতে যেতে যেন আরেকটা সার্কেল দাঁড়িয়ে যায়। হলোও তাই। আমি নতুন নায়ক নিয়ে আসতে পরিচালক ও প্রযোজকদের পরামর্শ দিলাম। আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানারা এলো। এদের সমসাময়িক প্রায় সবাই আমার হাত ধরে এসেছে। কোনো না কোনোভাবে তাদের চলচ্চিত্রে আগমনে আমার কন্ট্রিবিউশন আছে। ওরা সবাই সুপারহিট ছবি দিল। আমিও তাদের অনেকের সঙ্গে অভিনয় করলাম। আমার নায়িকারাই তাদের নায়িকা হলো। কবরী, ববিতা, শাবানা, রোজিনারা সফল হলো ওদের সঙ্গে। ইন্ডাস্ট্রিতে শূন্যতা আসেনি। আমার এই প্রজন্মের পরপরই জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চনরা এলো। বেশ শক্তভাবেই হাল ধরল।
# কী বলব দুঃখের কথা। ‘অবুঝ মন’সহ চারটি ছবি অলরেডি মুক্তি পেয়েছে। আমি বেশ জনপ্রিয় নায়ক। একদিন চিত্রালি থেকে সাংবাদিক এসে বলল, আমার একটা স্টোরি করতে চায়। তা-ও কভার পেজে নয়, ব্যাক পেজে। আর এখন? একটা ছেলে ছবি মুক্তির আগেই তারকা হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
সম্মাননা
দীর্ঘদিনের অভিনয় ক্যারিয়ারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে সাতটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন নায়করাজ রাজ্জাক। ২০১৫ সালে পান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় রেকর্ড সাতবার। এ ছাড়াও তার ঝুলিতে রয়েছে নামিদামি অসংখ্য পুরস্কার।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা