ঠিকাদার ও পরামর্শক নিয়োগেই ১৪ বছর
ব্রিটিশ আমলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর রেলপথটি ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে এটি বন্ধ হয়ে যায়। রেলপথটি সংস্কারে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১১ সালে। ১০ বছর পর রেলের মনে হয়েছে, এ ঠিকাদার দিয়ে হবে না। কার্যাদেশ বাতিল করতে হবে। পরবর্তীকালে এ সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসে কর্তৃপক্ষ। এখন আগের ঠিকাদারই কাজ করছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় পরামর্শকের মেয়াদও শেষ। নতুন করে দেশীয় পরামর্শকের মাধ্যমে কাজ শুরু করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ভারতীয় ঋণের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বারবার হোঁচট খাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। এভাবে ঠিকাদার আর পরামর্শক বদলের চক্করে রেলপথটি চালু হওয়া আরও সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা
ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘বালাজি রেলরোড সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। মূলত প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এর পর থেকে এভাবেই চলছে প্রকল্পটি। সর্বশেষ, দেশীয় প্রতিষ্ঠান আইআইএফসিকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আশার দিক হচ্ছে, ভারতীয় শর্তের প্যাঁচ থেকে মুক্ত হয়ে শিগগির তা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এ বিষয়ে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মো. সুলতান আলী আমাদের সময়কে জানান, প্রকল্পের সর্বশেষ মেয়াদ ছিল ২০২৪ সাল পর্যন্ত। আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর করা হয়েছে। বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ। পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।
জানা গেছে, ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট। ২০২০ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে চারটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত তালিকা পাঠায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। চতুর্থ দফায় প্রস্তাবের দরপত্রের মেয়াদ দুই বছর পার হয়ে যায়। ফলে মেয়াদ বৃদ্ধি সম্ভব হয়নি। পরে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত আরডিপিপি অনুমোদিত হলে জিওবি খাতে একক উৎসভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতিতে পরামর্শক নিয়োগের সিদ্ধান্ত আসে। এর অংশ হিসেবে সরকারি পরার্শক প্রতিষ্ঠান আইআইএফসির দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এর আগে কাজের গতি কমে যাওয়ায় ভারতীয় ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। পরে কাজের গতি বাড়ানোয় তাদের শেষ রক্ষা হয়। ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নাধীন এ রেলপথটি পুনঃনির্মাণ হলে কুলাউড়া-শাহবাজপুর অংশ আবার চালু হবে।
রেল সূত্র জানিয়েছে, ১৮৯৬ সালে চালু হয় কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটি। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি ট্রেন চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। পরে ২০০২ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ সংস্কারের প্রস্তাব ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন মেলে। তখন ব্যয় ছিল ১১৭ কোটি ৬৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা। পরে সরকারি ও দাতা সংস্থার অর্থায়ন মিলে ২০১৫ সালে খরচ ধরা হয় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। প্রকল্পের সর্বশেষ অনুমোদিত ব্যয় ৭২৮ কোটি ৪৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ (এলওসি) ৫৫৫ কোটি ৯৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।