৪ ঘন্টায় নদী গর্ভে ১৫ বাড়ি, মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই

রাজারহাট প্রতিনিধি
১৯ আগস্ট ২০২৫, ১০:৪২
শেয়ার :
৪ ঘন্টায় নদী গর্ভে ১৫ বাড়ি, মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই

চর গতিয়াসামের ভাঙন কবলিত বক্তার মিয়া জানান, ‘সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নদী ভাঙনের ফলে গত ৪ ঘন্টায় ১৫টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

সাংবাদিক দেখে ছুটে এলেন মধ্য বয়সী ফুলমতি বেগম। ‘নদীর তীরে আমাগো বাড়ি, জমি জিরাত নাই। কেউ আমাগো জায়গা দিতাছে না। বাড়িঘর খুইল্ল্যা অন্যের জমির আইলে মাল ছামান রাখছি। কেউ আমাগো খোঁজখবর নিতাছে না।’ হতদরিদ্র ফুলমতি সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে মাথায় ও কাঁধে করে বাড়ির জিনিসপত্র অন্যত্র নিয়ে যেতে যেতে আক্ষেপ করে জানালেন কথাগুলো।

প্রচন্ড গড়মের মধ্যে গাছের নীচে দম নিচ্ছিলেন খলিল মিয়া। দম নিয়ে খলিল মিয়া বললেন, ‘দুই ছেলে শাহীন আর ছামিউলের সঙ্গে রাতভর আসবাবপত্র, ঘর টানছি। এমন দ্রুত ভাঙছিল, দম নেওয়ার ফুসরত ছিল না। এখন তিন বাপবেটা মিলে পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে ৭০ হাজার টাকায় জমি কবলা নিছি। এখন থেকে সেখানেই থাকব।’

তিনি বললেন, ‘আমরা যারা কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর অপর পাড়ে চর গতিয়াসামে ছিলাম, তাদের অধিকাংশ মানুষ একই ইউনিয়নের সরিষাবাড়ি বাঁধে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেও জায়গা মিলছে না। ফলে যাদের সামর্থ আছে তারা পার্শ্ববর্তী রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার চর ঢ়ুষমারা ও চর গণাইয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, কেউ কেউ লালমনিরহাট জেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছে।’

চর গতিয়াসামের ভাঙন কবলিত বক্তার মিয়া জানান, ‘সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নদী ভাঙনের ফলে গত ৪ ঘন্টায় ১৫টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বাড়িগুলির মধ্যে রয়েছে, বক্তার আলী, রফিকুল খাঁ, আফতাব খাঁ, তোফাজ্জল, সিরাজ, মোন্নাফ, শাকারুল, মমিনুল, উমর আলী, সাইফুল, ছামিরুল, সাইদুল, ফারুক, শাহিন ও খলিলের।’

তিস্তা নদী ঘেঁষে অবস্থান নেওয়া চর খিতাব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুব রশীদ বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া আমাদের কোনো রক্ষা হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও ব্যাগ ফেলে এবারের মত স্কুলটি রক্ষা করা গেলেও পরের বন্যায় কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে এই এলাকায় প্রায় দেড়শ বাড়িঘর ভাঙনের ফলে লোকজন এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছেন। বর্তমানে স্কুলে ৮৬জন শিক্ষার্থী থাকলেও এখন স্কুলে শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ভাঙনের আতঙ্কে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল বিমুখ হয়েছে।’

রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার সহিদুল ইসলাম জানান, ‘গত ৪ দিনে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে প্রায় ৭০টি বাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। আমরা পরশুদিন ২৫টি বাড়ির তালিকা করে উপজেলা পরিষদে আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত খিতাব খাঁয়ে ৪টি ও চর গতিয়াসামে ৬টি বাড়িতে অর্থ ও ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে। বাকীরা এখন হা-হুতাশ করছে। ওই এলাকায় আরও দেড়শ বাড়ি নদী তীরবর্তীতে অবস্থান করছে।’

রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) আশাদুল হক জানান, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ৬৩টি বাড়ি ভাঙনের তথ্য রয়েছে। আমরা আগামীকাল প্রতিটি ভাঙন কবলিত পরিবারকে মাথা পিছু ৩০ কেজি করে চাল সহায়তা দেব। এছাড়া যারা খাদ্য সংকটে ভুগছেন বা অন্য কোনো সহায়তা লাগলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াব।’