গর্ভবতী মায়ের জ্বরের কারণ সতর্কতা ও করণীয়
বর্তমানে আবহাওয়ার পরিবর্তন, ভাইরাসের প্রকোপ এবং ডেঙ্গু ও কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে ঘরে ঘরে জ্বর ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েরাও এ থেকে মুক্ত থাকছেন না। তবে গর্ভাবস্থায় যেহেতু একজন নারীর দেহে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিছুটা দুর্বল থাকে এবং তার গর্ভের শিশুটির সুস্থতাও জড়িত থাকে, তাই জ্বরকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
জ্বরের সম্ভাব্য কারণ : এ সময় যে ধরনের জ্বর দেখা দিচ্ছে, তার অধিকাংশই ভাইরাসজনিত, বিশেষ করে মৌসুমি ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু ভাইরাস, কভিড-১৯ ইত্যাদি কারণে জ্বর হচ্ছে। সাধারণত এসব জ্বরে দেখা দেয়- গলাব্যথা, কাশি, সর্দি, মাথাব্যথা, শরীরব্যথা। কখনও কখনও পেট খারাপ বা বমিভাবও হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে যা করবেন : গর্ভবতী মায়ের শরীরে জ্বর দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কারণ জ্বরের ধরন ও স্থায়িত্ব বুঝে চিকিৎসা প্রয়োজন। জ্বরের মাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী Paracetamol Tablet গ্রহণ করা যেতে পারে। কখনও কখনও পায়ুপথে Paracetamol Suppository ব্যবহার করাও নিরাপদ। তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হতে হবে। সর্দি, কাশি বা ঠান্ডাজনিত উপসর্গ থাকলে সেই অনুযায়ী ওষুধও গ্রহণ করা যেতে পারে। জ্বরের পেছনে ভাইরাস ছাড়া অন্য কোনো কারণ আছে কিনা, তা বুঝতে হলে কিছু রক্ত পরীক্ষা জরুরি হয়ে পড়ে। যেমনÑ CBC (Complete Blood Count); Dengue NS1 Antigen, IgM/IgG; Covid-19 RT-PCR বা Rapid Antigen Test. বিশেষ করে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থাকলে রোগীকে নিয়মিতভাবে প্লাটিলেট কাউন্ট চেক করতে হতে পারে।
জ্বরের সময় শরীর অনেক বেশি পানি হারায়। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এতে মারাত্মক দুর্বলতা ও গর্ভের শিশুর ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এজন্য এ সময় বিশেষ কিছু খাবার বেশি পরিমাণে খেতে উৎসাহিত করতে হবে। পরিমিত পানি, লেবুর শরবত, ডাবের পানি, ফলের রস (যেমনÑ কমলার রস, বেলের শরবত), তরল খাবার (স্যুপ, সেমাই, দুধ), সহজপাচ্য ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমনÑ ডিম, মাছ, মুরগি খেতে হবে। পেট খালি রাখা যাবে না। কারণ তাতে রক্তচাপ ও গ্লুকোজ লেভেল কমে যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
জ্বরের সময়ে বিশ্রাম ও গর্ভের সন্তানের যত্ন : গর্ভবতী মায়ের জন্য বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে স্পঞ্জিং করতে হবে, যাতে জ্বর নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ সময় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গর্ভের শিশুর নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করা। স্বাভাবিক অবস্থায় শিশুর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নড়াচড়া প্রতিদিন অনুভব করা যায়। যদি দেখা যায় সন্তানের নড়াচড়া কমে গেছে, পেটে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হচ্ছে, রক্তপাত বা পানি বের হচ্ছে, তাহলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
যখন হাসপাতালে যেতে হবে : তীব্র জ্বর (১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি), জ্বর ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হওয়া, শ্বাসকষ্ট বা কাশি বেড়ে যাওয়া, সন্তানের নড়াচড়া বন্ধ বা কমে যাওয়া, পেটে ব্যথা, রক্তপাত বা পানি পড়া, প্রচণ্ড দুর্বলতা, মাথা ঘোরা বা বমি হওয়া।
গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতা নির্ভর করে যথাযথ যত্ন ও সচেতনতার ওপর। জ্বর হালকা সমস্যা হিসেবে না দেখে সময়মতো চিকিৎসা ও পরীক্ষা করানোই সবচেয়ে নিরাপদ। পাশাপাশি সঠিক পুষ্টি, বিশ্রাম এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জ্বরের সময়ে গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিশ্চিত করা যায়।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
লেখক : গাইনি বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
চেম্বার : আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর–পল্লবী শাখা
হটলাইন : ১০৬৭২, ০৯৬১০১০০৯৯৯
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন