এক্সিমের ৮৫৮ কোটি টাকা আত্মসাতে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
এক্সিমের ৮৫৮ কোটি টাকা আত্মসাতে দুদকের মামলা

একটি প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধভাবে ঋণ অনুমোদন করে এক্সিম ব্যাংকের ৮৫৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করেছে দুদক। মামলায় এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক নাসরিন ইসলামসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ঋণ নেওয়া প্রতিষ্ঠানটি মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটসের স্বত্বাধিকারী মোজাম্মেল হোসাইন এবং ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রয়েছেন।

গতকাল রবিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা ১-এ সংস্থাটির সহকারী পরিচালক শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটস নামে প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার জামানত ছাড়া বিদেশ থেকে পণ্য ক্রয়ের কথা বলে কোনো ধরনের পণ্য ক্রয় না করে ঋণের নামে ওই টাকা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

বেসিকের বাচ্চুসহ ৯ জনের নামে মামলা : ব্যাংকিং নিয়মনীতি অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদান করে ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই

বাচ্চুসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানান, কমিশনের উপপরিচালক সুমিত্রা সেন বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সালে বেলায়েত নেভিগেশন কোম্পানির নামে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেন। পরবর্তীতে তা সুদাসলে ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকা দাঁড়ায়। যা আসামিরা এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মামলায় বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান বাচ্চু ছাড়া অন্য আসামিরা হলেনÑ বেলায়েত নেভিগেশন কোম্পানির মালিক গাজী বেলায়েত হোসেন মিঠু, তার স্ত্রী নাহিদ আক্তার, ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক জাহাঙ্গীর আকন্দ সেলিম, বিজয় ভট্টাচার্য, অধ্যাপক কাজী আখতার হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, নিলুফার আহমেদ ও সাবেক মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক।

ডেল্টা অ্যাক্সেসরিজের চেয়ারম্যানসহ ১৫ জনের নামে মামলা : দি ডেল্টা অ্যাক্সেসরিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফারুক আহমেদ এবং তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ফেরদৌস আরা বেগমসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে সাউথইস্ট ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখায় পরিচালিত ৯টি হিসাবের মাধ্যমে ঋণের নামে ৫৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার বেশি উত্তোলন করেন। ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত সুদ ও অন্যান্য চার্জসহ ব্যাংকের মোট পাওনা দাঁড়ায় ১৫৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে ৯১ কোটি টাকা পরিশোধ করা হলেও অবশিষ্ট ৬৮ কোটি ২৭ লাখ টাকার বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীকে দুদকের নোটিশ : বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার স্ত্রী আফরোজা বেগমকে তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের নামে ৭০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে এ নোটিশ দেওয়া হয়।

গতকাল দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এই দুজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(১) ধারা অনুযায়ী সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করা হয়েছে।

দুদক বলছে, আহমেদ আকবর সোবহানের দেশে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৫ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ১৮৪ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার ৪৮৩ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তিনি মোট ২৫২ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার ২১৮ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন। তার স্ত্রী আফরোজা বেগমের দেশে ১১৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭১ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ৩৩৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৩ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার মোট সম্পদের মূল্য ৪৫৩ কোটি ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা।

দুদকের অভিযোগ, আহমেদ আকবর সোবহান ও তার স্ত্রী যৌথভাবে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার পাচার করে সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের লুগানো, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও আইল অব ম্যানে নিবন্ধিত কোম্পানির ব্যাংক হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এসব সম্পদ তাদের জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় যথাযথভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন গ্রহণ না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে তারা ওই দেশে পাচার করেছেন। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডের লুগানো, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও আইল অব ম্যানে নিবন্ধিত কোম্পানির ব্যাংক হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।