ওটিটিতে দর্শক দেখার মতো কনটেন্ট পাচ্ছে কি
বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়! বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত একটি বাক্য এটি। হাতে একটি স্মার্টফোন থাকা মানেই পুরো দুনিয়া আপনার কাছে। যখন যা ইচ্ছা বলা, দেখা এবং করা যাচ্ছে। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষ ও সহজলভ্যতায় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশে এমন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা দশের অধিক। এগুলোর মধ্যে অন্যতম চরকি, বঙ্গ, বিঞ্জ, আইস্ক্রিন, দীপ্ত প্লে, টফি। এ ছাড়া দর্শক ঘরে বসে দেখতে পারছেন নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও, হইচই প্রভৃতি বিদেশি ওটিটি। করোনা মহামারী থেকে অনলাইনে নাটক, সিরিজ ও সিনেমা দেখার প্রতি দর্শকের আগ্রহ তৈরি হয়; যা এখন সবার শীর্ষে। কিন্তু প্রশ্ন আছে, সাধারণ দর্শকের মনের মতো কনটেন্ট কি দিতে পারছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো? বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করা ওটিটি কি ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছে?
বিষয়টি নিয়ে চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘প্রতিটা মানুষের চাহিদা আলাদা আলাদা হয়। ফলে একেকটি প্ল্যাটফর্ম একেক রকমের কনটেন্ট তৈরি করছে। সেটার মধ্যে থেকেই দর্শক চাহিদা অনুযায়ী কনটেন্ট দেখছেন।’ রনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্যিক ধারার মতো করেই ওটিটির কন্টেন্ট বানাতে হয়। পরিবেশনার মাধ্যম ভেবে চিত্রনাট্যের আদল এবং নির্মাণের ঢঙসহ মূল ভাবনা সাজাতে হয়। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম যেহেতু অনেক, কাজেই গুণমান নিশ্চিত করার তোড়জোড় থাকে। যার কনটেন্ট ভালো, তার সাফল্যের হারও বেশি। এখানে প্রতিযোগিতা চূড়ান্ত। যদিও সেটি অনেকটা অসম বটে। কারণ নেটফ্লিক্সের কনটেন্টের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে আমাদের। যে দর্শক নেটফ্লিক্স দেখছেন, তিনি চরকিও দেখছেন। এজন্য কনটেন্টের মানের ব্যাপারে আপস করার সুযোগ নেই। কনটেন্টের মান ভালো হলে দর্শক আটকে রাখা সহজ হয়।’
বঙ্গর চিফ কনটেন্ট অফিসার মুশফিকুর রহমান মঞ্জু। তার ভাষ্যে, ‘আমাদের দেশের দর্শক যা দেখতে চায়, তেমন কিছু নিয়েই সিরিজ নির্মাণ করা উচিত। এখানে বাজেটও একটা বিষয় থাকে। তবে ভালো কনটেন্ট নির্মাণ করতে হলে বাজেট ঠিকঠাক দিতে হবে। আমরা সব সময়ই চেষ্টা করে আসছি দর্শকের রুচির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে।’ আইস্ক্রিনের হেড অব কনটেন্ট অর্ক বলেন, ‘বলতে গেলে চলতি বছর থেকে আমরা আবার নতুন করে অনেক কিছু শুরু করেছি। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। অরিজিনাল কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছি। চেষ্টা করছি, দর্শক যে ধরনের কনটেন্ট দেখতে চান, সেটা নিয়েই কাজ করতে। আশা করছি, বছর শেষে আইস্ত্রিন একটা ভালো অবস্থানে থাকবে।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
ওটিটির জন্য কনটেন্ট বানিয়ে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন নির্মাতা নজর কেড়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম আশফাক নিপুণ। তিনি বলেন, ‘সত্যিটা হচ্ছে, আমি যে ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে সিরিজ নির্মাণ করেছি বা করছি- সেগুলো কিন্তু সেন্সর বোর্ড কখনোই পাস করত না। পৃথিবীর কোনো ওটিটিতেই নীতিমালা কিংবা সেন্সরশিপ নেই। তাই এই গল্প ওটিটিতে বলতে পেরেছি।’ কিন্তু ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে ওটিটি সেবার সংজ্ঞা নির্ধারণ করার পাশাপাশি ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে; যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই নির্মাতা। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে বর্ধনশীল যে কোনো শিল্পকে যেখানে কর রেয়াতের সুযোগ দেওয়া হয়, সেখানে মাত্র কয়েক বছর হলো যাত্রা শুরু করা এই ওটিটি বলয়ের ওপর বাড়তি ১০% সম্পূরক ট্যাক্সের সরাসরি প্রভাব পড়বে বাজেটে এবং গল্পে, প্রভাব পড়বে বৈধভাবে গ্রাহক নেওয়ার ক্ষেত্রে। পাইরেসির প্রকোপ আরও বাড়বে এবং দিন শেষে সবার ব্যবসা হবে সংকুচিত।’
ওটিটিতে জয়া আহসানের অভিষেক হয়েছে ছয় বছর আগে। ২০১৯-এ হইচইতে মুক্তি পেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সিরিজ ‘পাঁচফোড়ন’। চলতি বছর তিনি এলেন দেশের ওটিটি প্ল্যাটফরমে। চলতি বছরের শুরুতে চরকিতে মুক্তি পায় নুহাশ হুমায়ূনের সিরিজ ‘২ষ’-এর শেষ পর্ব ‘বেসুরা’। এতে ডাইনিরূপে দেখা গিয়েছিল জয়াকে। তিনি বলেন, ‘দর্শকদের সামনে বুফের মতো করে আমরা নানান রকম খাবার দেব। রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী তারা বেছে নেবেন। তবে যেটাই বানাই না কেন, তাতে যেন শিল্পমান ও রুচিবোধ থাকে। ওটিটিতে এমন কিছু ভালো কাজ করতে চাই। একটু বুঝেশুনে ওটিটির কাজ হাতে নিয়ে থাকি। কারণ ওয়েবের জন্য খুব ভালো ও রোমাঞ্চকর কিছু কাজ করতে চাই।’
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
বাজেটের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘অভিনয় জানা শিল্পীদের উপযোগী মাধ্যম ওটিটি। যারা অভিনয় জানেন, তারা এখন সুবিধা করতে পারছেন। তা ছাড়া যেসব কনটেন্ট নির্মাতা একটু অন্যভাবে ভাবেন, তারা এতদিন হয় সিনেমার বাজেট পাচ্ছিলেন না কিংবা নাটকে তাদের পোষায়নি। তারা এখন ওটিটিতে নিজেদের কাজ দেখানোর সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী এখন ওটিটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। সেই জায়গা থেকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশের অন্যতম একটি মাধ্যম হতে পারে ওটিটি।’
বাংলাদেশের ওটিটিগুলোর একটি বিশেষ দিক হলো তাদের কিছু কনটেন্ট ফ্রি এবং বিশেষ কনটেন্ট প্রিমিয়াম, যা অর্থের বিনিময়ে দেখতে হয়। মানে আপনি সাবস্ক্রাইবার হলেই যে সবকিছু দেখতে পাবেন, এমন না। এ নিয়ে দর্শকের বিস্তর অভিযোগ আছে। অভিযোগ আরও আছে যৌনতা, অপরাধ, সহিংসতা নিয়ে। এটা অনেকে পছন্দ করছেন, আবার অনেকে করছেন না। কিন্তু বৈশ্বিক চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, বিষয়টি স্বাভাবিক এবং এভাবেই কাজ হয়।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা