শতাধিক ট্রাক থেকে ৭০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

সিলেট ব্যুরো
১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯:২৫
শেয়ার :
শতাধিক ট্রাক থেকে ৭০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে যৌথবাহিনী। অভিযানে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক গাড়ি থেকে প্রায় ৭০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে পুনঃস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত থেকে শুরু হয়ে আজ বৃহস্পতিবার দিনভর চলা অভিযানে সিলেট-ভোলাগঞ্জ ও সিলেট-জাফলং সড়কে শত শত ট্রাক আটক করা হয়। এসব ট্রাকে ভোলাগঞ্জের বিভিন্ন পাথরভাঙা কল ও ডাম্পিং জোন থেকে ভাঙা পাথর বোঝাই করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তবে মূল জায়গার বদলে সড়কে এমন অভিযানের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ট্রাকচালকরা। এতে তারা হয়রানি ও বেকায়দায় পড়েছেন বলে দাবি করেন।

এই অভিযানে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই শতাধিক গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে ১৩০টি ট্রাকের প্রায় ৭০ হাজার ঘনফুট পাথর আটক করে সাদাপাথরে পুনঃস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া কালাইরাগসহ বিভিন্ন ডাম্পিং জোন থেকেও পাথর জব্দ করার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

গত এক বছরে সাদাপাথর থেকে লুট হয়েছে আনুমানিক দেড় কোটি ঘনফুট পাথর।

আজ বৃহস্পতিবার সাদাপাথরে বেড়াতে আসা জব্বার হোসেন বলেন, ‘চুরি হয়েছে কোটিতে, আর প্রতিস্থাপন হচ্ছে হাজারে। তবু প্রশাসনের এই উদ্যোগ একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।’

পরিবেশকর্মীসহ স্থানীয়রা বলছে, লুট হওয়া সব পাথর উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। তবে প্রশাসন এখন যে তৎপরতা দেখাচ্ছে, সিলেটের পরিবেশ ও পর্যটনের স্বার্থে তাদের এমন নজরদারি প্রয়োজন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা বলেন, ‘এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন, মজুত বা পাচারে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এর মধ্যে পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সাদাপাথর এলাকায় রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার করে আসছে। সম্প্রতি এই লুটপাট আগের সব সীমা ছাড়িয়েছে। পাহাড় থেকে ঢলের সঙ্গে নেমে আসা স্তুপিকৃত পাথরের সঙ্গে সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রের মাটি খুঁড়ে তুলে নেওয়ায় হয় পাথর। অনেকটা একই দশা আরেক পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়েও দেখা গেছে। এতে এসব এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীব বৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহের নজিরবিহীন লুটপাটের পর টনক নড়ে প্রশাসনের। চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারে ও নিরাপত্তা জোরদারে পদক্ষেপ নেয় জেলা প্রশাসন। তারেই অংশ হিসেবে আজ বিকেলে সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। এ সময় ইঞ্জিনচালিত অর্ধশতাধিক নৌকায় জব্দ হওয়া পাথর এনে পুনরায় সাদাপাথর এলাকায় ফেলা হয়।

চুরি হওয়া পাথর ফেরত এনে আগের অবস্থানে বসানোসহ জেলা প্রশাসনের পাঁচ দফা সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, জাফলং ইসিএ ও সাদাপাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী মোতায়েন, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন, অবৈধ ক্রাশিং মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং চুরি হওয়া পাথর আগের স্থানে ফিরিয়ে আনা।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এর আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা আগামী রবিবার তারা প্রতিবেদন জমা দেবে। এছাড়া আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক উদ্ধার হওয়া পাথর সাদাপাথরে পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে।’

তবে জেলা প্রশাসনের কাছে লুটপাটে জড়িতদের তালিকা আছে কিনা, এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।