অভিযান চলছে /

৭০ ট্রাক থেকে প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

সিলেট ব্যুরো
১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৪:১২
শেয়ার :
৭০ ট্রাক থেকে প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে গতকাল বুধবার দিবাগত রাত থেকে অভিযান শুরু করেছে যৌথবাহিনী। অভিযানে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত শতাধিক গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে ৭০টি ট্রাকের প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর আটক করে সাদাপাথরে পুনঃস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার অভিযানে সিলেট-ভোলাগঞ্জ ও সিলেট-জাফলং সড়কে শত শত ট্রাক আটক করা হয়। এসব ট্রাকে ভোলাগঞ্জের বিভিন্ন পাথরভাঙা কল ও ডাম্পিং জোন থেকে ভাঙা পাথর বোঝাই করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

তবে মূল জায়গার বদলে সড়কে এমন অভিযানের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ট্রাক চালকরা। এতে তারা ব্যাপক হয়রানি ও বেকায়দায় পড়েছেন বলে দাবি করেন। 

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও পরিবেশ বাঁচাতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন, মজুত বা পাচারে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

লুট হওয়া পাথরের তুলনায় এখন পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া পাথরের পরিমাণ অতি সামান্য বলেও জানান সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। 

এদিকে পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সাদাপাথর এলাকায় প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার করে আসছে। সম্প্রতি এই লুটপাট সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। পাহাড় থেকে ঢলের সঙ্গে নেমে আসা স্তুপিকৃত পাথরের সঙ্গে সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রের মাটি খুঁড়ে তুলে নেওয়ায় হয় পাথর। অনেকটা একই দশা আরেক পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়েরও। এতে এসব এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

এই অভিযানে পাথর উদ্ধারের পরিমাণ নিয়ে সন্দেহ থাকলেও এলাকাবাসী বলছেন, সিলেটের পরিবেশ ও পর্যটনের স্বার্থে প্রয়োজন প্রশাসনের সার্বক্ষণিক নজরদারি। 

বৃহস্পতিবার ভোলাগঞ্জ সড়কে দেখা যায়, পাথরবোঝাই ট্রাক থামিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি চালক ও সংশ্লিষ্টদের করা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ। আমদানি করা পাথরের ট্রাক ছেড়ে দিয়ে জব্দ করা হচ্ছে অবৈধ পাথর।

তবে চালকরা অভিযোগ করেন, তাদের কাছে বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও হয়রানি করা হচ্ছে। অবৈধ পাথর উদ্ধারে স্টোন ক্রাশার জোনে অভিযান চালানোর দাবি জানান তারা।

সিলেটের সাদাপাথরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নজিরবিহীন লুটপাটের পর চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারে ও নিরাপত্তা জোরদারে পদক্ষেপ নেয় জেলা প্রশাসন।সিদ্ধান্ত হয়, চুরি হওয়া পাথর ফেরত এনে আগের অবস্থানে বসানো হবে এবং ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী মোতায়েন থাকবে। বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সার্কিট হাউজে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। এর আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা আগামী রবিবার তাদের প্রতিবেদন দেবে।

প্রশাসনের পাঁচ দফা সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, জাফলং ইসিএ ও সাদা পাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী মোতায়েন, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন, অবৈধ ক্রাশিং মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং চুরি হওয়া পাথর আগের স্থানে ফিরিয়ে আনা।