এখনও অধরা চিন্ময়ের সহযোগী আয়ান শর্মা

চট্টগ্রাম ব্যুরো
১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৪৬
শেয়ার :
এখনও অধরা চিন্ময়ের সহযোগী আয়ান শর্মা

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি কারাবন্দি ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর প্রধান সহযোগী এবং ৩টি ফৌজদারি মামলার আসামি আয়ান শর্মা এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েননি। অথচ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির উসকাানিদাতাসহ আরও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে আওয়ামী লীগের পক্ষে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ আছে আয়ান শর্মার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের অর্থায়নে পরিচালিত চট্টগ্রাম প্রতিদিন পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক পদের দাপট দেখিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন আয়ান। একই সঙ্গে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করাও থেমে নেই। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ফ্যাসিস্টের দোসর আয়ান শর্মাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম ডিসি অফিসের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকেও তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জানানো হয়েছে। এ মর্মে সনাতনী সমাজের পক্ষ থেকে ডিসি অফিসে স্মারকলিপিও পেশ করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আয়ান শর্মা। ছবি: সংগৃহীত  

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, নগরীর কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা একটি মামলার (নং ৪৭) আসামি আয়ান শর্মা। গত বছরের ৩০ নভেম্বর মামলাটি করেছিলেন খানে আলম। পেনাল কোডের ধারা ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩২৩, ৪২৭, ৩৪ এবং ১৯০৮ সনের বিস্ফোরক আইনে মামলাটি করা হয়। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয় গত বছরের ২৬ নভেম্বর। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এতে ইসকনপন্থি আইনজীবীরা আদালতে হট্টগোল করেন এবং আদালত নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। চিন্ময়ের অনুসারীরা বিভিন্ন উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে ত্রিশূল, রাম-দা, কিরিচ, বঁটি, লোহার রড, হকিস্টিক, লাঠিসোটা নিয়ে তারা সরকারি স্থাপনা এবং যানবাহনে ভাঙচুর চালান। পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির উদ্দেশে কোর্টবিল্ডিং জামে মসজিদে ইটপাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ করে মসজিদের কাচ ও জানালা ভাঙচুর করেন। এ সময় মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরাও আহত হন।

চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আয়ান শর্মাকে আসামি করে আরও একটি মামলা করেছেন হাসিনা মমতাজ। ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দাখিল করা মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পেনাল কোডের ১০৯, ১১৫, ১৫৩-এ, ১৭৭, ২০২, ২০৩, ৩২৩, ৩২৬, ৩০৭, ৩২৯, ৩৩৮, ৩৪২, ৩৫৫, ৩৬৪, ৩৭৯, ৩৮৬, ৫০৬-পার্ট-২, ৫২৪, ৩৫৪, ৩৪ এবং ১৯০৮ সনের বিস্ফোরক আইনের ৩, ৪ ও ৬ ধারায় এতে অভিযোগ আনা হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে আয়ান শর্মা। ছবি: সংগৃহীত

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রামের মুরাদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে গুলি, বোমা হামলাসহ বিভিন্ন নির্যাতন করার ছবি ও ভিডিও থাকার পরও চট্টগ্রাম প্রতিদিন পত্রিকা নীরব ভূমিকা পালন করে। উল্টো ছাত্রলীগকর্মীদের ভবন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার মতো মিথ্যা তথ্য দিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিন সংবাদ প্রচার করেছে ‘ছাত্রলীগ নেতার রগ কেটে দিল কোটাবিরোধীরা এবং চোখ উপড়ে নিল আরেক যুবকের’ শিরোনামে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন সংবাদ প্রকাশ করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অন্যায় ও নৃশংসভাবে হত্যার জন্য ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের উসকানি দিয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি অভিযোগে করা আরও একটি মামলার (সিআর মামলা নং ৩০০২) আসামি আয়ান শর্মা। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইশ^রখাইন এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক চৌধুরীর করা মামলাটি গ্রহণ করে কোতোয়ালি থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণকে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামি চিন্ময় কৃষ্ণ তার অনুসারীদের বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশে আদালত প্রাঙ্গণে পরিকল্পিতভাবে অভূতপূর্ব সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিচারিক কাজে বাধা, আইনজীবী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা ও খুনের মাধ্যমে নাশকতার হুকুম দিলে আসামিরা একই উদ্দেশে পরিকল্পিতভাবে লাঠিসোটা এবং গেরুয়া কাপড়ে জড়ানো ত্রিশূল নিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- করতে থাকে। আসামিরা মসজিদে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে এবং ধর্মীয় দাঙ্গা ও ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টির উদ্দেশে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে মসজিদে উপস্থিত মুসল্লি­দের উদ্দেশ করে সবাই একযোগে ‘একটা-দুটা মুসলিম ধর, ধরে ধরে জবাই কর’ বলে সেøাগান দিতে থাকে। এটি বাদীসহ অন্যান্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অনুভূতিতে মারাত্মকভাবে আঘাত হানে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে আয়ান শর্মা। ছবি: সংগৃহীত

কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আবদুল করিম আমাদের সময়কে বলেন, আইনজীবী আলিফ হত্যা এবং এ সংক্রান্ত মামলাগুলো বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। তারাই গ্রেপ্তার বা আইনি পদক্ষেপ নেবে। তবে আদালত যদি এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন অথবা আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে থানায় পাঠান, তাহলে আমরা অবশ্যই ওই আসামিকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

প্রসঙ্গত, আয়ান শর্মার বিরুদ্ধে অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে কনসার্টের নামে তিন লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া; পুলিশ সদস্যের কাছে চাঁদা দাবি; খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন, মানুষকে হয়রানি, ধর্মীয় দাঙ্গার উসকানি, মাদক ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্যতাসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, সাংবাদিকতা পেশাকে কলঙ্কিত করবেন না মর্মে ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে তিনি মুচলেকাও দিয়েছিলেন। এ ছাড়া রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের চরিত্র হনন করে সংবাদ প্রকাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।