বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
লালমনিরহাট টানা ভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি আবারও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৯ মিটার, যা বিপৎসীমা ৪ সেন্টিমিটার ওপরে।
নদীপাড়ের মানুষ ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টি এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে আজ বুধবার ভোররাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা ও ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও ওই দিন দুপুরে তা বেড়ে দুই সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছে। যা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে নদীর উভয় পাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে ডুবে গেছে চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ও আমন ধানের ক্ষেত, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বহু পরিবার। অনেকে গবাদি পশু ও মালপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।
তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার একাধিক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী ও নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল রয়েছে।
পানি প্রবাহ যত বাড়ছে, বন্যার শঙ্কাও তত বাড়ছে। এতে তিস্তার বাম তীরবর্তী লালমনিরহাটে তৃতীয় দফায় বন্যার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পানির চাপের কারণে অনেক রাস্তা ও বাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে।
তিস্তাপাড়ের গোবর্ধন গ্রামের ফরিদ মিয়া বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে নদীর পানি বাড়ছে। ডুবে যাচ্ছে চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, পানিবন্দি হচ্ছে মানুষ। আকাশের পানি আর নদীর পানি একাকার হয়ে গেছে।’
গড্ডিমারী এলাকার ভ্যানচালক আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট। পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি পরিবারগুলো।’
সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেই আমার ইউনিয়নের দেড় হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, ‘বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। আগামী দুই দিন এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে, তবে পরে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও রাস্তাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি।’