রনির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী সেই শৌভর নামে জিডি

বিনোদন প্রতিবেদক
১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৪:২৭
শেয়ার :
রনির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী সেই শৌভর নামে জিডি

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির সিইও, নির্মাতা রেদওয়ান রনির বিরুদ্ধে পেশাগত হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং মিডিয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজের সুযোগে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন আরেক নির্মাতা শৌভ রহমান রনি। যিনি এক সময় রেদওয়ান রনির সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে সিনেমা, চিত্রনাট্য ও অডিওভিজ্যুয়াল মাধ্যমে কাজ করছেন শৌভ রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমার সমস্যা শুরু হয় ২০১১ সালে, যখন আমি রেদওয়ান রনির সহকারী হিসেবে কাজ করতাম। সেই সময় থেকেই তিনি আমার প্রতি একটি ব্যক্তিগত বিরাগ পোষণ করে আসছেন।’

এখানেই শেষ না, বর্তমানে চরকির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় রেদওয়ান রনি তার প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে শৌভ রহমানকে বঞ্চিত করছেন বলেও অভিযোগ আনা হয়। আর রেদওয়ান রনির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে সম্প্রতি মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন শৌভ।

এবার শৌভর নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেন ওটিটি মাধ্যম চরকিতে কর্মরত শাহরিয়ার সাগর। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ডায়েরিটি করা হয়। এরই মধ্যে জিডির কপি এসেছে দৈনিক আমাদের সময়’র হাতে।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়, শৌভ রহমান রনি দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মতান্ত্রিক ও অসাধু উপায়ে চরকিতে কাজ দেওয়ার জন্য এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভুয়া পরিচয় ব্যাবহার করে হুমকি প্রদান করে আসছে। প্রথমে অভিযুক্ত শৌভ রহমান ২০২৪ সালের ১৭ এপ্রিল পূর্ব নির্ধারিত মিটিং ছাড়া দৈনিক প্রথম আলো কারওয়ান বাজার কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় অবস্থিত চরকির অফিসে এসে নির্মাতা হিসেবে যোগ্যতার প্রমাণ ছাড়াই কাজ পাওয়ার জন্য চাপ প্রদান করলে স্বনামধন্য প্লাটফর্ম চরকিতে কাজের ন্যূনতম যোগ্যতার বিষয়ে ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়টি অবহিত করা হয়। অতঃপর শৌভ রহমান কিছু গল্প জমা দিলে চরকির ‘কন্টেন্ট সিলেকশন টিম’র মতে তার এ সকল গল্পগুলো মান সম্মত না হওয়ায় এবং নির্মাতা হিসেবে যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় ‘কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ বিভাগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। যোগ্যতার অভাবে কাজ না পাওয়ায় শৌভ রহমান আমাকে তার গল্প নির্বাচনের জন্য অনৈতিক সাহায্যের দাবি করতে থাকে, একপর্যায়ে ক্ষতির হুমকি দেওয়া শুরু করে। অতঃপর ফেসবুক এর মাধ্যমে আমার ও চরকির সিইও, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত নির্মাতা রেদওয়ান রনির মানহানি ও অপপ্রচার করে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এরপর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নতুন করে অনৈতিক চাপ প্রদান করতে থাকে। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত শৌভ রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয়ে সাহেব মাহমুদ সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৪ তারিখে আমাকে ফোন দিয়ে শৌভ রহমানকে কাজ না দিলে ক্ষতির হুমকি ও রেদওয়ান রনির নামে অপপ্রচার, মিথ্যা মামলা, বিভিন্ন ধরনের হলুদ সাংবাদিকদের দিয়ে অসত্য সংবাদ পরিবেশন ও ইউটিউবার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে মান সম্মানের ক্ষতি সহ সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়।

অভিযোগে বলা হয়, পরবর্তীতে, আহমেদ ইশতিয়াক হিমেল নামের একজনের ইউটিউব একাউন্টে রেদওয়ান রনির নামে অসত্য তথ্য দিয়ে, একটি মিথ্যা অভিযোগ সংবলিত ভিডিও লিংক অপপ্রচার করে ক্ষতি করার চেষ্টা করে। এতেও শৌভ রহমান তার অনৈতিক স্বার্থ হাসিল না করতে পেরে এবার চরকি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে একই রকমভাবে যোগ্যতা ছাড়া অনৈতিকভাবে চরকিতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রদান করতে থাকে।

উল্লেখ্য যে চরকির জন্য চলচ্চিত্র ও সিরিজ নিয়মিত নির্মাণ করেন এমন প্রতিষ্ঠান যেমন আলফা আই এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানেও একইরকম ভাবে অভিযুক্ত শৌভ রহমান তার গল্পের মান ও নির্মাতা হিসাবে তার যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রস্তাবনা বাতিল হলে উক্ত অফিসে কর্মরত নারীকর্মী, কাশফী আহসান বৃষ্টিকে হেনস্তা, হুমকি প্রদান ও ফেসবুকে গালাগালি, শ্লীলতাহানিসহ নানানভাবে উত্তক্ত ও সহিংসতার হুমকি প্রদান করতে থাকে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে শৌভ রহমান তার অনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে আলফা আই এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বনামধন্য প্রযোজক জনাব শাহরিয়ার শাকিলকে জুলাই ২০২৫-এর চতুর্থ সপ্তাহে মোবাইলে কল দিয়ে এনসিপির ভুয়া পরিচয় দিয়ে চরকিতে জোরপূর্বক কাজ লাভের জন্য চাপ দেয়। অনৈতিকভাবে কাজ দিতে অস্বীকার করলে চাঁদা দাবি করে, অন্যথায় একই ভাবে ক্ষতি করার হুমকি প্রদান করলে জনাব শাহরিয়ার শাকিল বিষয়টি চরকিকে অবহিত করেন। ইতিমধ্যে শৌভ রহমান তার ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিহিংসামুলক, অশালীন, বিভ্রান্তিমূলক, অসত্য, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, মনগড়া, কল্পকাহিনী ও আক্রমণাত্মক হুমকি সম্বলিত বক্তব্য, ফেসবুক পোস্ট এবং বিভ্রান্তিমূলক ছবি পোস্ট/প্রচারের মাধ্যমে আমার এবং আমার চাকরিরত প্রতিষ্ঠানের সিইও, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা রেদওয়ান রনির, চরকি, ও মিডিয়াস্টার সংশ্লিষ্ট স্বনামধন্য পত্রিকা প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মানহানি ও অপপ্রচার করে, সোশ্যাল মিডিয়ার কমেন্ট সংযুক্ত।’

জিডিতে বলা হয়, উল্লেখ্য অভিযুক্ত শৌভ রহমান তার অসৎ উদ্দেশ্য সফল না হলে এ পর্যায়ে, ৩১ মার্চ ২০২৫ এবং ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে রেদওয়ান রনির স্থায়ী সাং দহপাড়া, পাবনাতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে, পেশাগত স্বার্থ উদ্ধারে অনৈতিক ও অবৈধ সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে রেদওয়ান রনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে, অন্যথায় আবারও মানহানি ও অপপ্রচারের হুমকি দেয় এবং ক্ষতির উদ্দেশে ভয়ভীতি প্রদান করে। উক্ত সমস্ত অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে কোন ক্রমেই ক্ষান্ত না দিলে এবং এনসিপির ভুয়া পরিচয়ে উপরে উল্লেখিত সময়ে চাঁদা চাওয়ার পর শৌভ রহমানের বাবা এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে আমি তার ছেলের কৃত অন্যায় বিষয়ক কর্মকাণ্ড তাকে জানাই। উনি নিজে চরকিতে এসে সিইও রেদওয়ান রনির সাথে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন এবং আমি মিটিং এর দিন ধার্য করে তাকে জানাই।

উল্লেখ করা হয়, ‘এরপর ৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে অভিযুক্ত ব্যক্তি, তার পিতা ও বাল্যবন্ধু (নাম: কাজী মাহমুদুল হাসান শুভসহ আমাদের কারওয়ান বাজারস্থ অফিসে আসেন। সংশ্লিষ্ট সবার ও একজন চরকির আইনজীবীর উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। অভিযুক্তের পিতা সব শুনে তার ছেলে অভিযুক্ত শৌভ রহমানের অন্যায় ও অন্যায্য দাবি করে হুমকি ও ক্ষতি করার বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন ও ভবিষ্যতে তার ছেলে এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন এবং তার ছেলে যেন যোগ্য নির্মাতা হিসেবে কাজ শিখতে পারেন সেজন্য কোনো একটি শুটিং ইউনিটে শিক্ষানবিশ হিসেবে পরিচালকের সহকারী পদে কাজের সুযোগ প্রদান করতে অনুরোধ করেন। আমরা নির্মাণ শিক্ষার বিষয়ে একজন প্রবীণ মানুষের অনুরোধ বিবেচনায় নেই ও সহযোগিতার আশ্বাস দেই। কিন্তু হঠাৎ এই সময় শৌভ রহমান তার বাবাকে উক্ত পদে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ শেখার ব্যাপারে অনীহা জানায় এবং ব্যবসা করবে বলে টাকা চায়। অতপর সবার সামনে বাবার সাথে বাক বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। উপস্থিত সকলের সামনে তার এ ধরনের অপ্রকৃতিস্থ আচরণ নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির আচরণ বলে প্রতিয়মান হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তির বাবাকে আমরা পাশের রুমে ডেকে শৌভরহমানের বাল্যবন্ধুর উপস্থিতিতে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করার ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করি। এরপর তিনি তার ছেলে শৌভ রহমানকে টাকা দিতে অস্বীকার করলে ও অপকর্মের দায়ভার নিবেনা বলে জানালে, শৌভ রহমান আরও ক্ষতির ও প্রয়োজনে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ফাঁসানোর হুমকি দেয়।

অভিযোগকারীর কথায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি ইতিপূর্বেও উভয়পক্ষের পরিচিত নির্মাতা জনাব আতিক জামানকে মোবাইল টেক্সটে আত্মহত্যার চেষ্টার হুমকি দিয়ে ফাঁসানোর কথা বলেছিল, মেসেজটি সংরক্ষিত আছে। দুঃখজনক যে অভিযুক্তের পিতার ও বন্ধুদের নিষেধ সত্ত্বেও, অভিযুক্ত ব্যক্তি পূর্বের ন্যায় সামাজিক যোগাযোগ ও নানান ডিজিটাল মাধ্যমে মানহানি ও ক্ষতি করার হুমকি অব্যাহত রাখে। এ পর্যায়ে অভিযুক্তের পিতা নিজেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে তার ছেলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে জেলে আটকে রাখার কথা বলেন এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার ছেলের অপরাধ সমূহের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তার কোন আপত্তি থাকবে না বলে জানান।

সবশেষে বলা হয়, উক্ত ঘটনার পরে, উপরে উল্লেখিত ৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে আবার প্রতিহিংসা ও কুৎসামূলক ফেসবুক পোস্টটি প্রকাশ করে। অভিযুক্ত বাক্তির মানহানিমুলক ও মিথ্যা অপপ্রচারের কারণে ব্যবসায়িক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমাজে আমার এবং রেদওয়ান রনির ও দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান চরকির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে এবং আমরা শারীরিক, পারিবারিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি।

এর আগে, স্মারকলিপি দেওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে শৌভ জানিয়েছিলেন এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ও ফেসবুক লাইভে বিস্তারিত জানাবেন। এরপর মামলাও করতে পারেন বলে জানান তিনি। অন্যদিকে রেদওয়ান রনি জানিয়েছিলেন, খুব শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেবেন তিনি।