বাংলাদেশে হাতি হুমকির মুখে
আজ বিশ্ব হাতি দিবস
বিশ্ব হাতি দিবস আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- মাতৃপতি এবং স্মৃতি। বনভূমি ধ্বংস ও খাবারের অভাবে বাংলাদেশে হাতি টিকে থাকার লড়াই করছে। রোহিঙ্গা শিবির ও রেললাইনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক প্রাকৃতিক করিডোর। খাবারের অভাবে হাতি গ্রামে ঢুকে ফসল ও ঘরবাড়ি নষ্ট করছে, এতে বাড়ছে হাতি-মানুষ সংঘর্ষ। গত ১০ বছরে কক্সবাজারে হাতির আক্রমণে ৬২ জন মানুষ মারা গেছেন, আর ৩৩টি হাতি বিদ্যুৎস্পৃষ্টসহ নানা কারণে মারা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করিডোর পুনরুদ্ধার ও নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত না হলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে বন্যহাতি বিলুপ্ত হতে পারে।
২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবস পালন করা হচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় হাতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রাণীকে বলা হয় ‘প্রকৃতির ইঞ্জিনিয়ার’। বিশ্বে এশীয় হাতি এখন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায়। বর্তমানে কক্সবাজারে মাত্র দুই শতাধিক হাতি রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। ১০ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৩০০-এর বেশি। হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব কমানোর পাশাপাশি বনে খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করাও জরুরি। হাতি বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষকেও হাতি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রোহিঙ্গা শিবির ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কারণে অনেক করিডোর বন্ধ হয়ে গেছে। বনভূমি ধ্বংস ও খাবারের অভাবে হাতি মানুষের গ্রামে চলে আসে। তখন শুরু হয় হাতি-মানুষ সংঘর্ষ। এতে ফসল নষ্ট হয়, প্রাণহানি ঘটে।
কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজরা এলাকার কৃষক রহিম উল্লাহ বলেন, পাহাড়ে চাষ রক্ষা করা যাচ্ছে না। হাতি ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে। প্রায় প্রতি রাতেই গ্রামে হাতি আসে। খবর দিলে বন বিভাগের রেসপন্স টিম এসে হাতি তাড়িয়ে দেয়। পরিবেশ সাংবাদিক এমআর মাহমুদ বলেন, করিডোর হারিয়ে হাতির দল প্রায়ই গ্রামে ঢুকে পড়ে। তারা ধানের ক্ষেত, কলাগাছ, সবজি ক্ষেত নষ্ট করে। এতে গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয় এবং সংঘর্ষ হয়। অথচ পরিবেশ রক্ষায় হাতির বেঁচে থাকা দরকার।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দিন জানান, হাতির খাবারের জন্য বাঁশ, ঘাস, কলাগাছ রোপণ করা হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় রেসপন্স টিম সবসময় প্রস্তুত থাকে। নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ. ন. ম. হেলাল উদ্দিন বলেন, খাবারের অভাবে অনেক হাতি ভারত ও মিয়ানমারে চলে যাচ্ছে। অথচ পরিবেশ রক্ষায় তাদের এখানেই রাখা দরকার। নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা জরুরি। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মারুফ হোসেন জানান, হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ চলছে। সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, আগে কক্সবাজারে হাতির জন্য ১২টি করিডোর ছিল। এখন অর্ধেকেরও বেশি বন্ধ। করিডোর পুনরুদ্ধার ও বন দখল বন্ধ করা দরকার।