শুল্ক নিয়ে ১১৫ বছর আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি করছেন ট্রাম্প?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১০ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৪৫
শেয়ার :
শুল্ক নিয়ে ১১৫ বছর আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি করছেন ট্রাম্প?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে ‘পাগলামি’র জেরে ১৯১০ সালের জায়গায় ফিরে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর জেরে ফের একবার বিশ্ব অর্থনীতিতে মহামন্দার ঝড় আসতে পারে বলে সতর্ক করেছে আইএমএফ এবং ডব্লিউটিও। পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের বিশেষ এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। 

সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ১১৫ বছর আগের ‘ঐতিহাসিক ভুল’-এর পুনরাবৃত্তি করছেন ট্রাম্প। আর এতে করে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা দেখা গেছে বলেও দাবি করে তারা। 

তারা বলছেন, স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ক নিয়ে তার ‘পাগলামি’ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ছিন্নভিন্ন করতে পারে বলে এবার সতর্ক করল খোদ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন বা ডব্লিউটিও) এবং আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড বা আইএমএফ)।

চলতি বছরের ৮ আগস্ট বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে ট্রাম্পের বসানো শুল্ক নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আইএমএফ এবং ডব্লিউটিও। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি সামগ্রীতে গড়ে শুল্কের পরিমাণ ২০ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। ১৯১০ সালের পর আর কখনওই বিদেশি পণ্যে এতটা শুল্ক চাপায়নি যুক্তরাষ্ট্র, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওই দুই আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

এর আগে গত ৭ আগস্ট বাংলদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের আমদানি পণ্যকে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতির আওতায় আনেন ট্রাম্প। ফলে সামগ্রিক ভাবে শুল্ক এক লাফে বেড়ে ২০ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছে যায়। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি শপথ নেওয়ার সময় এই পরিমাণ ছিল মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ। 

২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রথম বার প্রেসিডেন্ট থাকালীন চীনের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে জড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। সে সময়ে আমদানি করা পণ্যে গড় শুল্ক ছিল মাত্র তিন শতাংশ। কিন্তু বেইজিংয়ের পণ্যে উচ্চ হারে কর আরোপ হওয়ায় সেটা বেড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশে গিয়ে পৌঁছোয়। কিন্তু, তাতেও দমে গিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেননি ট্রাম্প। 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯১০ সালে আমদানি করা পণ্যে ২০ শতাংশের বেশি শুল্ক নিত তৎকালীন মার্কিন সরকার। পরবর্তী তিন দশকে সেই সূচক ক্রমান্বয়ে নেমে পৌঁছায় পাঁচ শতাংশে। ১৯৩০-এর দশকে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলে বাড়তে থাকে শুল্কের অঙ্ক। ১৯৩৫ সালের মধ্যে সেটা ফের চলে যায় ২০ শতাংশে। তার পর অবশ্য ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্রমাগত নিম্নমুখী ছিল এই সূচক।

১৯১০ সালে আমেরিকায় শুল্ক হার বেশি থাকার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রথমত, ওই সময়ে বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যিক সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল না যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয়ত, ইউরোপের অবস্থা ছিল টালমাটাল। সংঘাতের আশঙ্কায় ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, অটোমান তুরস্ক এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলি হাতিয়ার জমা করতে শুরু করে, যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে মাত্র চার বছরের মধ্যে বেধে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ইউরোপের এই অস্থিরতা যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি-রপ্তানিকে প্রভাবিত করেছিল।