তৃতীয় ধাপের আলোচনা শেষে জুলাই সনদ

আসাদুর রহমান
১০ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
তৃতীয় ধাপের আলোচনা শেষে জুলাই সনদ

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে বিষয়ভিত্তিক সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর পর্যালোচনা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে দাখিল করা প্রতিবেদন নিয়ে দুই দফা সংলাপও হয়েছে। জুলাই মাসে ঐকমত্যের বিষয়গুলো চূড়ান্ত করে ‘জুলাই সনদ’ করার কথা ছিল। কিন্তু এখনও তা হয়নি। বিশেষজ্ঞ ও দলগুলোর সঙ্গে আবারও সংলাপে বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণও প্রায় চূড়ান্ত। প্রশ্ন উঠেছে- জুলাই সনদ কবে হবে?

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলছেন, দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় ধাপের আলোচনা ও বিশেষজ্ঞ মতামত পাওয়ার পর সনদ চূড়ান্ত হবে। প্রাথমিক খসড়া সবাইকে দেওয়া হয়েছে। তারা মতামত দিয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে ‘সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া’ আবার পাঠানো হবে আগামী দুদিনের মধ্যে। সবাই একমত হলে স্বাক্ষরের দিন নির্ধারণ করা যাবে।

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় মাসের জন্য কাজ শুরু করে ঐকমত্য কমিশন। মেয়াদ শেষ হবে ১৫ আগস্ট। মেয়াদ বাড়বে কি না, তা সরকার নির্ধারণ করবে। আলী রীয়াজ বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে অগ্রগতি দেখে প্রয়োজন হলে সরকার এই সিদ্ধান্ত দেবে। কাজের অগ্রগতি কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, প্রথম পর্বের সংলাপে ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টিতে ঐকমত্য হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিষয় সরকার এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছে। দ্বিতীয় পর্বে ২০টি সাংবিধানিক বিষয়ে আলোচনা হয়। ১১টিতে সবাই একমত, ৯টিতে অধিকাংশ দলের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া ৯টি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া হবে।

যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন; বিরোধী দল থেকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব নির্ধারণ; নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান; উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ; পর্যায়ক্রমে উপজেলায় নিম্ন আদালত স্থানান্তর; জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা; প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; নির্বাচন কমিশন গঠন পদ্ধতি; প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান সংস্কার; প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি নয়; স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন; সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব; সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন; সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব; নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ; রাষ্ট্রের মূলনীতি; এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ পদ্ধতি।

ভিন্নমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আসা বিষয়গুলো হলো- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন; নারী প্রতিনিধিত্ব; বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ ও সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ; প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকা; সরকারি কর্মকমিশন, দুদক, সিঅ্যান্ডএজি এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে সংযোজন করা; উচ্চকক্ষ গঠন; রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব; তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিষয়ক প্রস্তাবসমূহ; এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি।

এদিকে দলগুলো সব প্রস্তাবে একমত না হওয়ায় সনদের খসড়া তৈরি হলেও চূড়ান্ত হয়নি। খসড়ায় বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী দুই বছরে সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে দলগুলো। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি নেই। তবে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই এগুলোর বাস্তবায়ন চাইছে। দলগুলোর মতপার্থক্য থাকলেও আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা আশা করছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, দলগুলোর একমত না হওয়া সমস্যা নয়। তারা নিজেদের দাবি পূরণের জন্য চাপ দেয়। নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার ইচ্ছে কারও থাকলে তারা ঘোঁট পাকাবে। তবে যেহেতু নির্বাচনের সময় ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে, তাই যা হয়েছে তার ভিত্তিতেই স্বাক্ষর হওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ৩৮টি দল ও জোটের মতামত নেয় ঐকমত্য কমিশন। ৩৩টি দল মতামত দেয়। ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের ৪৫টি অধিবেশনে প্রথম পর্যায়ের সংলাপ হয়। ৩ জুন দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হয়, যা ৩১ জুলাই শেষ।