সাংবাদিক হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না: জিএমপি কমিশনার
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেছেন, ‘সাংবাদিক (আসাদুজ্জামান তুহিন) হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না৷ আমাদের ব্যর্থতা ও জনবল স্বল্পতা রয়েছে। পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ দমন করা সম্ভব হয় না। এখানে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। ’
আজ শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর ওয়্যারলেস গেট এলাকায় জিএমপির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন তিনি।
জিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের ওপর ছিল। আমরা প্রিভেন্ট করতে পারিনি। প্রিভেনশন সব সময় করা যায় না। বিশ্বের কোনো দেশ ক্রাইম একেবারে শূন্যতে নিয়ে আসতে পারেনি। তাই, আমাদের শত চেষ্টার পরেও ক্রাইম হয়ে যেতে পারে। যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’
তুহিন হত্যারি বর্ণনা দিয়ে ড. নাজমুল করিম খান বলেন, ‘এই ঘটনার প্রথম ভিকটিম বাদশা মিয়া স্থানীয় একটি এটিএম বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তোলেন। বিষয়টি দেখে তাকে ফাঁসানোর জন্য গোলাপি বাদশাকে হানিট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করেন। গোলাপির সঙ্গে কথাবার্তার একপর্যায়ে বাদশা মিয়া বিষয়টি বুঝতে পারেন, যে তাকে হানিট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপর কথাবার্তার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং বাদশা মিয়া গোলাপিকে ঘুসি মারেন। সিসিটিভি ফুটেজে বিষয়টি দেখা যায়।’
তিনি বলেন, ‘গোলাপিকে ঘুসি মারার পরপরই আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা গোলাপির সহযোগীরা ৫-৬ জন এগিয়ে এসে চাপাতি দিয়ে বাদশা মিয়াকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। তখন বাদশা মিয়া সেখান থেকে পালিয়ে যাবার সময় এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। সাংবাদিক তুহিনের ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি আসামিরা দেখে ফেলে। তখন তারা বুঝে যায় যে, এই ভিডিওর মাধ্যমে তাদের অপরাধ মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়বে।’
জিএমপি কমিশনার বলেন, ‘তারপর আসামিরা সাংবাদিক তুহিনের ভিডিওটি কেড়ে নেওয়ার জন্য তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় এবং তাকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে সাংবাদিক তুহিন একটি চা স্টলে আশ্রয় নিলে তাকে সেখান থেকে ধরে এনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর পরই আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। ফুটেজ দেখে আমরা আটজনকে চিহ্নিত করেছি। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি৷ বাকি একজনকেও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে পারব৷’
তুহিন হত্যার আসামিদের ব্যাপারে ড. নাজমুল করিম খান বলেন, সাংবাদিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর এলাকার মিজান ওরফে কেটু মিজান (৩৫), তার স্ত্রী গোলাপী (২৫), পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সোনাহারা গ্রামের মো. স্বাধীন (২৮), খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার ময়লাপোতার আল আমিন (২১), কুমিল্লার হোমনা থানার আন্তপুর গ্রামের শাহজালাল (৩২), পাবনার চাটমোহর থানার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের মো. ফয়সাল হাসান (২৩) ও সুমন নামের একজন।
তিনি বলেন, হত্যার প্রধান আসামি কেটু মিজানের নামে ১৫টি মামলা রয়েছে। কেটু মিজানের স্ত্রী পারুল আক্তার ওরফে গোলাপি, যিনি হানিট্র্যাপ কার্যক্রমে জড়িত। অপর আসামি আল আমিনের দুটি মামলা, স্বাধীনের নামে দুটি মামলা, শাহজালালের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা, ফয়সাল হাসানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে।
জিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সংঘবদ্ধ চক্রের অপরাধের চিত্র ধারণ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন সাংবাদিক। এ ঘটনায় আমাদের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ আছে, প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী আছেন। সমস্ত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। তুহিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই আদালতে চার্জশিট দিতে পারব। আমরা আশা করি দ্রুত তাদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সাজার সংস্কৃতি নিশ্চিত করা গেলে ক্রাইম দমন করা যাবে। আসামিরা যদি নাও স্বীকার তবে, এভিডেন্সই তাদের অপরাধ প্রমাণ করবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশ এখনো তাদের মনোবল ফিরে পায়নি। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। গাজীপুরে ৫ আগস্টের পর অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেলে ক্রাইম বেড়ে যায়। এটা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ ছাড়া আগের রেজিম এই জেলায় শক্তিশালী। সেই দলটি চায় না গাজীপুর স্থিতিশিল হোক। তারা গাজীপুরকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সেটিও নজরদারি করা হচ্ছে। এই নজরদারি করতে গিয়ে অন্যান্য অপরাধে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। তবে, মানুষের স্বস্তি ফেরাতে কাজ করছে জিএমপি।’